রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

বই বিতরণ নিয়ে মানুষ যেন ক্ষুব্ধ না হয় যে উদ্দেশ্য নিয়ে অভ্যুত্থানের জন্ম সেটা ধারণ করতে হবে

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি বিভাগের ৩১টি জেলার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় যুক্ত হয়ে এই নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। তিনি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, সার সরবরাহ এবং শিল্প এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। কনফারেন্সে ১৯ জন বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ পুলিশ প্রধান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন। খবর বাসসের। কনফারেন্সের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও মতামত আগামীদিনে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, এটা আমার জন্য প্রথম সুযোগ ছিল আপনাদের সঙ্গে কথা বলার। অনেক কিছু শিখলাম, অনেক বিষয়ে নিজেকে অবহিত করলাম। এটা আমাদের কাজে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, সামনে রমজান আসছে, রমজানকে কেন্দ্র করে বাজার মূল্যের দিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর রাখবেন। শুধু বাজার মূল্য নয়, জিনিসপত্র আনা নেওয়া আরও কীভাবে সহজ করা যায় সে বিষয়েও কাজ করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রব্যমূল্য একটি বড় ইস্যু। চেষ্টা করা হচ্ছে কীভাবে এটাকে আয়ত্তে আনা যায়। আগের থেকে আয়ত্তে আনারও সুযোগ বর্তমানে আরও বেশি সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগটা ব্যবহার করে দ্রব্যমূল্য আয়ত্তে আনার ক্ষেত্রে আমরা যেন প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকি। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া আমাদের খুব দরকার। এটার ওপর জোর দেওয়ার অনুরোধ করছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার যে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন খুব শিগগিরই তাদের রিপোর্ট প্রদান করবে। এসব প্রতিবেদনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে, নাগরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনের একটি পরিবেশ তৈরি হবে। রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া কী হবে সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে করে শান্তিপূর্ণভাবে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোন কোন দ্রব্যের অভাব হলে মানুষের কষ্ট হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন সারের অভাব হলে কৃষকের কষ্ট হয়। তাই কোনো জিনিসের অভাব হওয়ার আগে আমরা যেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে খবর দিতে পারি যে এই পণ্যের অভাব হতে পারে। এখানে এই পরিস্থিরি সৃষ্টি হতে পারে, সে খবরও দিতে হবে। যেমন আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বন্যা হলো। এ ধরনের আকস্মিক পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, এর প্রস্তুতিও রাখতে হবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে, কোন জেলা ভালো করলো। প্রতিযোগিতা অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে গ্রেডিং করা যেমন আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেয়েছি। শাস্তির জন্য না, বরং নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে আসা এর উদ্দেশ্য। এই একটা শ্রেণিবিন্যাস যদি করা যায়তাহলে খুব ভালো হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, একটা বড় ধরনের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন যদি আমাদের কাজে কর্মে প্রতিফলিত না হয় তাহলে খুব দুর্ভাগ্যজনক হবে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই অভ্যুত্থানের জন্ম হলো সেটাকে ধারণ করতে হবে। যে কাজ করব সেটা দেখে মানুষ যেন মনে করে বড় পরির্তন হয়েছে। পরিবর্তনটা যেন চোখে লাগে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা বাকি চার বিভাগের ৩৩টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই ধরনের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন।

বই বিতরণ নিয়ে মানুষ যেন ক্ষুব্ধ না হয় : বিডিনিউজ জানায়, নতুন বছরে শৃঙ্খলভাবে যাতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়, সেই নির্দেশনা মাঠ প্রশাসনকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, বই বিতরণ হবে, সেটা নিয়ে না কথা উঠবে। কেউ বই পেল না। উপরের থেকে বই বিতরণের যে ব্যবস্থা আছে সেটা যদি প্রপার নাও হয়, বই ঠিকমতো আসেনি, কেউ পেয়েছে কেউ পায়নি; কিন্তু নিজের মতো করে, সবার সঙ্গে আলাপ করে সুন্দর শৃঙ্খলবদ্ধভাবে ঠিক করে রাখলে, জানিয়ে রাখলে তারাও শান্ত থাকে। কিন্তু অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে মানুষ একটু ক্ষুব্ধ হয়।

ছেলেমেয়েরা বই পাচ্ছে নাএমন উদ্বেগ থেকে অনেকের মনে দ্বন্দ্ব, অশান্তির সৃষ্টি হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই অশান্তি নিরসনে আমাদের নিয়ম মেনে (বই বিতরণ) করতে হবে। নিয়ম মেনে দিলে মানুষ মানতে চায়, নিয়ম না থাকলে যত বিপদ। আমরা যেন নিজেরা নিয়মের ভেতরে থাকি, মানুষকেও জানাই আমরা নিয়মের মধ্যে আছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইতিহাস সৃষ্টি করা ২০২৪ বিদায় নিচ্ছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীকে মারধর,পরে সমঝোতা