মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় ফজিলতপূর্ণ ইবাদত ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। মাহে রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় আরো বেশি ফজিলতপূর্ণ। প্রত্যেক রোজাদার সাহরি খেতে শেষ রাতে আরামের শয্যা ত্যাগ করে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। সাহরি গ্রহণের একটু আগে ভাগে অর্থাৎ ৪০/৫০ মিনিট আগে জাগ্রত হলে তখন প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সহজ হয়ে ওঠে। রোজার মাসে যেহেতু সাহরির জন্য অবশ্যই ঘুম থেকে জাগ্রত হতে হয়, তাই পুরো এক মাস তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত হওয়া রোজাদারের জন্য বড় সুযোগ। মাহে রমজানে প্রিয় নবী (দ.) রাতের শেষ প্রহরে জাগতেন এবং পরিবারের সবাইকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাগিয়ে দিতেন। যাতে পরিবারের সকলেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন।
রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবি তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ নিদ্রা ত্যাগ করা। যেহেতু আরামের শয্যা ত্যাগ করে এই বিশেষ নামাজ পড়া হয়, তাই একে তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। এই নামাজের আরেকটি নাম কিয়ামুল লাইল বা রাতের নামাজ। তাহাজ্জুদ নামাজ এমনিতে খুবই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। আর রমজান মাসে এ নফল নামাজ আদায় করা হলে বাড়তি সওয়াব বা পুণ্য মেলে। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও মাহাত্ম্যের কথা কুরআন–হাদিসে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা বনি ইসরাইলের ৭৯ নং আয়াতে আল্লাহ পাকের বাণী– ‘রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন। এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে।’ সূরা মুজ্জাম্মিলের ২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক জানেন, আপনি সালাতে দাঁড়ান কখনো রাতের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক–তৃতীয়াংশ সময়ে এবং আপনার সঙ্গে একটি দলও দাঁড়ায়, যারা আপনার সঙ্গে আছে।’ তাহাজ্জুদ নামাজ ৪ রাকাত, ৮ রাকাত কিংবা ১২ রাকাতও আদায় করা যায়। মনে রাখতে হবে, মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অতীব মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন সিয়াম সাধনার পাশাপাশি বাক সংযম ও আত্মসংযমের ওপরও জোর দিতে হবে। রোজা রেখে অনর্থক কাজ করা, অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। দিনে রাতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, দরূদ শরিফ পাঠ, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়, গরিবদের মাঝে অবিরত দান সদকাহ এবং সঠিকভাবে জাকাত বিতরণ করে যেতে পারলে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ সহজ হবে। রোজার মাসে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। আপনি এ বছর রোজার মাস পেয়েছেন। আল্লাহপাক বাঁচিয়ে রাখলে হায়াত থাকলে আগামী বছর হয়তো আবার রোজার মাস পাবেন। মনে করতে হবে এবছরই শেষ রোজার মাস। আল্লাহ পাকের বিশেষ দয়া হলে হয়তো আগামীতে রোজা পাবেন। তাই, রোজার মাসটি হেলায় অবহেলায় না কাটিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে পার করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে।