দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করতেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি প্রিয় নবীর (দ.) আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত। তিনি রোজার মাসে অধিক পরিমাণে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ে মনোনিবেশ করতেন। তিনি প্রায় সময় সারারাত তাহাজ্জুদে কাটিয়ে দিতেন। তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ বিবৃত হয়েছে কোরআন মজিদে।
আল্লাহপাক কোরআন মজিদে প্রিয় নবী (দ.) কে সম্বোধন করে বলছেন– ‘হে চাদরাবৃত! আপনি রাতের সামান্য অংশে জাগরণ করুন। অর্ধরাত বা তার চেয়ে কম অথবা সামান্য বেশি। আপনি কোরআন মজিদ পাঠ করুন ধীরস্থিরভাবে (সূরা মুজ্জাম্মিল: আয়াত ১–৪)। প্রিয় নবীর (দ.) কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল ছিল নামাজ। তিনি নামাজের মাধ্যমে বিশেষ প্রশান্তি খুঁজে পেতেন। প্রিয় নবী (দ.) বলেন, ‘নামাজকে আমার চোখের প্রশান্তি করা হয়েছে’। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৫০)। ফরজ নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতিও সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন নবীজী (দ.)। তিনি বলেন, ‘রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম হলো মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)। নবীপত্নী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বি) বলেন, ‘প্রিয় নবী (দ.) রাতে খুব বেশি নামাজ আদায় করতেন। এমনকি তাঁর পা ফুলে যেত। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (দ.)! আপনি এতো কষ্ট করেন কেন? প্রিয়নবী (দ.) উত্তরে বলেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দাহ হবো না’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৪৮৩৭)।
নবীজী (দ.) রোজার মাসে নিজে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের এবং সাহাবায়ে কেরামকেও অধিক পরিমাণে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে শুধু রোজার মাসে নয় সারা বছরই নবীজী (দ.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাগিদ দিতেন। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অলসতা দেখলে তিনি সতর্ক করতেন। প্রিয় নবী (দ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তার পূর্ববর্তী পাপ ক্ষমা করে দেবেন। (সূনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর ২১৯৭)। যারা সারা বছর গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সুযোগ পান না, তাদের জন্য বড় সুযোগ রোজার মাস। যেহেতু এ মাসে সবাই সেহরি খেতে জাগ্রত হন, তাই সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। একটু আগে ভাগে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। এতে অশেষ পুণ্য অর্জিত হবে এ আশা করা যায়। দুই রাকায়াত করে চার রাকায়াত, আট রাকায়াত বা বারো রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। যত বেশি পড়া যায় ততই সওয়াব বা পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে।