রমজানের সঠিক খাদ্যাভ্যাস

হাসিনা আকতার লিপি | সোমবার , ১৮ মার্চ, ২০২৪ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

বছরের একটিমাত্র মাস সারা বিশ্বের মুসলিম নরনারীর জন্য ১টি কাঙ্ক্ষিত এবং ফজিলতপূর্ণ মাস। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে এই মাসটির জন্য, থাকে নানান ধরনের আয়োজনও। সব পরিকল্পনা মাফিক করতে গেলে অবশ্যই নিজেকে এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরি। সেজন্যই খাদ্য ব্যবস্থা হতে হবে সুষম এবং সহনশীল। অন্যান্য দিনের খাদ্যব্যবস্থার মতো না, রমজানের খাদ্য ব্যবস্থা একটু আলাদা। কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। ওদিকে ইফতার, সন্ধ্যারাত, ভোররাত, তিনবেলা থাকে খাবারের জন্য সময়। এই সময়ের মধ্যেই সারাদিনের পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করতে হবে।

কিখাবেন : খাদ্যের ৬ টি উপাদান প্রতিবেলার খাদ্যে থাকতেই হবে। যেমন/ শর্করাঃ ৫০৬০% শর্করা থেকে নিতেই হবে। যেমনভাত, রুটি, আলু, চিড়া, মুড়ি, খৈ। ২/ প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবারঃ ২০২৫% শক্তি নিতে হবে এই জাতীয় উপাদান থেকে। যেমনমাছ, মাংস, দুধ, ডিম, দই, বাদাম, বিভিন্ন ধরণের ডাল, বীচিজাতীয় খাবার ইত্যাদি। ৩/ স্নেহ বা ফ্যাট জাতীয় খাবারঃ ১৫২০% এই উপাদান থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। যেমনরান্নার বিভিন্ন রকম তেল, ঘি, মাখন, বাটার, বাদাম, তেল, তিসি। ৪/ খনিজ লবণঃ প্রচুর খাওয়া যাবে। ৫/ ভিটামিনঃ প্রচুর খাওয়া যাবে। ৬/ পানিঃ প্রচুর খাওয়া যাবে।

রোজায় কিছু খাবার খাবেন না : ক্যাফেইনটেড ড্রিংকসচা, কফি, এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদি। অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত বিশেষ করে টেস্টিং সল্ট মিশ্রিত খাবার খাবেন না। বিশেষ করে সেহরিতে তেহরী পোলাও, খাসীগরুর মাংস, খিচুরী, পিৎজা, শুকনো রুটি, বার্গার এড়িয়ে চলুন। আসলে আমরা যতোই বলি এসব স্বাস্থ্যসম্মত নয় ওটা স্বাস্থ্যসম্মত তারপরও দেখেছি আমাদের দেশের প্রচলিত যে খাবারগুলি বুট, পিঁয়াজু, বেগুনী এসব ছাড়া যেন ইফতার চলেই না। খাওয়া যাবে, পরিমানমতো। তবেই সুস্থতা সম্ভব।

রমজানের খাদ্য তালিকা : ইফতারে যেকোনো একটি পানীয় বা শরবত রাখা জরুরি

*আনারস, তরমুজ, জাম্বুরা, জাম, কমলা, অথবা রসালো ফলের রস অর্ধেক গ্লাস, সাথে অর্ধেক গ্লাস পানি ও ১ চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে।

* মিষ্টি স্বাদের জন্য এসপারটেম মিশানো যায়।

* লাচ্ছি (চিনিবিহীন দই দিয়ে বানানো), মিল্ক শেক (পাকা কলা, পেঁপে, আম ও দুধ দিয়ে বানানো), কচি ডাবের পানি।

ইফতারে ফল :

* খেজুর ২৩ টা।

* মিষ্টি ফল যেকোনো ১ টি। যেমন১টা কলা/ আপেল/ কমলা/ মোসাম্বি অথবা লিচু ৬ টা, আতা ফল ১ টা/ কাঁঠাল ৩ কোয়া বা পাকা পেঁপে ৬০গ্রাম/ নারকেল ২৪ চা চামচ অথবা বেদানা অর্ধেক বা পাকা বেল ১/২ বা আনারস ৬০ গ্রাম/ আঙুর ৩টা/ তাল ১ কাপ।

* শশা, ক্ষীরা, গাজর, কাঁচা পেয়ারাঃ ইচ্ছামত।

ইফতারে অন্যান্য খাবারযেকোনো ১টি

* বুট ভূনা ১/১ কাপ, মুড়ি ২৩ কাপ, পিঁয়াজু ২/৩ টা, বেগুনী ২/৩ টা, হালিম ১ কাপ। অথবা

* চিড়া (ভিজানো)- ২ কাপ, কলা ১ টা, দই১ কাপ। অথবা

* পরোটা/পুরিমাংসডাল/হালিম। অথবা

* ভাতমাছ/ মাংস/ ডাল/ সবজী।

রাতে খাবার (৯টা১০টা)- যেকোনো ১ টি

* ভাত, মাছমাংসসবজী, ডাল/দুধ। অথবা

* আটার রুটিমাছ/ মাংসসবজীডাল/ দুধ

খাবারের পরিমান অন্য সময়ের রাতের খাবারের মতো

সেহেরিতে খাবারযেকোনো ১ টি

* ভাত, মাছ/ মাংসডাল/ দুধসবজী/ ফল। অথবা

* আটার রুটি/ পাউরুটি, মাছ/ মাংসডাল/ দুধসবজী/ ফল।

খাবারের পরিমাণ অন্য সময়ের দুপুরের খাবারের মতো হবে।

খাওয়া উচিতঃ

* তিনবেলা (ইফতার, রাত, সেহেরি) খাবার খেতে হবে।

* সেহেরির শেষ সময়ের অল্পক্ষণ আগে খেতে হবে।

* পরিপূর্ণ খাবার খেতে হবে।

উচিত নয় : অল্প পরিমাণে খাবার খেয়ে রোজা রাখা ডায়াবেটিক ব্যক্তির উচিত নয়।

সতর্কতা : যাদের ওজন অনেক অনেক বেশি অর্থাৎ স্থুলতা স্তর দুই এ আছে তাদের তেলে ভাজা ভূনা খাবারে সতর্ক থাকতে হবে, সেই সাথে যেকোনো বেলায় হাঁটতে হবে ৩০ মিনিট।

কিডনী রোগীর ক্ষেত্রে সতর্কতা : অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখবেন। * খাবারে সব ধরণের ডাল এবং ডাল দিয়ে তৈরী নানান ধরণের খাবারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ডায়বেটিক রোগীর ক্ষেত্রে সতকর্তা : তিন বেলায় খাবার খেতে হবে। * সেহেরিতে পরিপূর্ণ খাবার খেয়ে রোজা রাখতে হবে। * সকল ধরণের চিনি/গুড় জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে।

লেখিকা : চট্টগ্রামের প্রথম ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, কনসালট্যান্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে আজ
পরবর্তী নিবন্ধধনিক শ্রেণি অক্টোপাসের মতো রাজনীতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে