মুসলিম সমাজের জন্য রমজান একটি পবিত্র মাস। দীর্ঘ ১১ টি মাস পরে এই পবিত্র মাসটি আসে। এই মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যধিক। এই মাসে দিনের একটি সময় সমস্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা হয়।
বৈজ্ঞানিক ভাবে বলা হয়, ফাস্টিং বা দীর্ঘ সময় খাবার থেকে বিরত থাকার ফলে মানব দেহের এক বিশেষ জৈবিক প্রক্রিয়া ফ্যাগোসাইটোসিস দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ভক্ষণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফাস্টিং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল ও অতিরিক্ত চর্বি নিয়ন্ত্রণ, ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। রমজানে দীর্ঘ ১১ মাসের দূষণ থেকে শরীরকে পরিশুদ্ধ হতে সাহায্য করে।
রমজানে খাদ্যের ভূমিকা: রমজানের আসল উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সারাদিন রোজা রেখে যদি ইফতার ও সেহেরীতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যায় তবেই রোজার সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেহেরী ও ইফতারে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।
ইফতারে কী খাবেন: ইফতারে সঠিক খাবারই সারাদিনের শারীরবৃত্তীয় কাজকে ত্বরান্বিত করে। তাই অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। চিনি ও চিনিযুক্ত যেকোন খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন ছোলা, টকদই, সিজনাল ফল, খেজুর, ফলের জুস, সবজির সুপ, শশা, গাজর, সিদ্ধ ডিম, চিকেম সালাদ, ফিশ চপ জাতীয় বাসায় তৈরি খাবার। এছাড়া দই চিড়া, পানীয় হিসাবে চিনিমুক্ত লেবু বা মালটার শরবত, সিয়া সিড বা ইসুবগুলের শরবত, দই কলার লাচ্ছি, আপেল জুস রাখা যেতে পারে।
সেহেরিতে যা খাবেন : সেহেরিতে তেল চর্বিযুক্ত খাবার যেমন বিরিয়ানি, খিচুড়ি, তেহেরী বাদ দিতে হবে। একটি পরিপূর্ণ খাবার মেনুতে শর্করার উৎস হিসাবে লাল চালের ভাত, রুটি, ওটস বা বার্লি; আমিষ জাতীয় খাবারের উৎস হিসাবে যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এবং সবজি বা ফল থাকবে। রমজান মাসে রোজা রেখে একই সাথে সুস্থ থাকা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিছু নিয়ম মেনে চলুন।
১. অতিরিক্ত খাবার একসাথে খাবেন না। খাবার সময় নিয়ে চিবিয়ে খান। এতে করে হজমে সমস্যা হবে না। এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে। ২. ভাজা পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। সম্ভব না হলে অন্তত পক্ষে যেকোন একটি আইটেম রাখতে পারেন।অবশ্যই ঘরে বানানো হতে হবে। ৩. ইফতারের পর থেকে সেহেরি অবধি পর্যাপ্ত পানি পান করুন এতে সারাদিন পানি শূন্যতা হবে না। ৪. রোজায় দিনে ব্যায়াম না করে ইফতারের পরে ব্যায়াম করতে পারেন। ৫. সেহেরিতে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন। ৬. যাদের এসিডিটির সমস্যা তারা সেহেরিতে কাঁচা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। ৭. একই তেলে বারবার ভাজা ভাজি করবেন না। এটা ক্ষতিকর। ৮. যাদের চা কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। এগুলো পানি শূন্যতার জন্য দায়ী। ৯. শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না। ১০. ঘুমানোর আগে ও সেহেরির পরে দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না। এতে দাঁত ভালো থাকবে।
এছাড়া যারা মধ্যরাতের খাবার গ্রহণ করবেন তা যেন অবশ্যই হালকা কিছু হয়। ইফতারের পর থেকে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করবেন। যাদের ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, কিডনি রোগসহ অন্যান্য সমস্যা রয়েছে তারা চেক–আপ করিয়ে শরীরের অবস্থা অনুযায়ী পুষ্টিবিদের পরামর্শে ডায়েট চার্ট করে নিবেন। সুস্থতার সঙ্গে কাটুক আপনাদের রমজান।
পুষ্টিবিদ তাহমিনা আক্তার : নিউট্রিশন কনসালটেন্ট, প্রয়াস–চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট;
চেম্বার – ইজি ডায়েট কনসালটেশন সেন্টার










