রোজার আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী–এমন এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, রোজার আগে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ ও চিনি পেতে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গত শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে যে পেরিশেবল বা পচনশীল আইটেমগুলো আমদানি করি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। রমজানের আগে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি যাতে আমরা পাই, সে সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’ ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে পীযূষ গয়ালের কার্যালয়ে ওই বৈঠকে দু‘দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাছান মাহমুদ বৈঠকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা প্রত্যাহার এবং বিশেষ করে রমজান মাসে মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে পীযূষ গয়ালকে অনুরোধ করেন। তারা পারস্পরিক স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সরকার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে এর কোনো প্রভাব নেই বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, কমার পরিবর্তে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটারে দুই টাকার কাছাকাছি। পেঁয়াজের দামও আগের মতোই অস্থির। খুচরা বাজারে দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কয়েকদিন আগেও যে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল সেই পেঁয়াজ শুক্রবার ১০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও। চিনি আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে কমেছে আলু ও শীতকালীন সবজির দাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সরকার প্রায় এক মাস ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণ বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেসব তৎপরতা বা অভিযান বাজারকে প্রভাবিত করতে পারছে বলে এখনো অনুভূত হয়নি। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে খাদ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সর্বদাই তাদের নিজ নিজ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। কিন্তু মূল্য পরিস্থিতি ভোক্তার কাঙ্ক্ষিত নাগালের কাছে–মধ্যেই আসছে না! ভরা মৌসুমের মধ্যে একদিকে চালের ঊর্ধ্বমূল্য, অন্যদিকে শীতকালীন শাক–সবজির ভালো উৎপাদনের মধ্যে এসবের মূল্য সাধারণের ক্রয়–ক্ষমতাকে সদম্ভে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে! এ অবস্থার মধ্যে আসন্ন রমজান মাসের সম্ভাব্য সংকটের কথা চিন্তা করে সাধারণের মধ্যে দিশাহারা মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর সরকার ৫ শতাংশ রাজস্ব কর হ্রাস করেছে। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে সাময়িকভাবে আমরা কিছুটা স্বস্তি লাভ করেছি। কিন্তু আমাদের এ স্বস্তি শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নানা ছলাকলা ও কারসাজির কারণে অস্বস্তিতে পরিণত হয় কিনা রমজান মাস এলেই তা পরিষ্কার বুঝতে পারব। আপাতত আশায় বাঁচি, আশা না থাকলে বাঁচা কঠিন! সাধারণ মানুষ নানাভাবে আশায় বুক বেঁধে এবং এক ধরনের চাপা অস্বস্তি নিয়ে টিকে আছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কথিত সিন্ডিকেট কর্তৃক দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত চক্রপ্রবাহের মধ্যে পড়ে সাধারণের স্বস্তিও দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে! ভরসা একটাই, এবার অন্তত সরকার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বিগ্ন তা নিজেই স্পষ্ট করেছে। সমপ্রতি সড়কপথ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘বিএনপির আন্দোলন নয়, বরং বাজার নিয়ে চিন্তিত’ এমন বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা স্বীকার করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বাজার শব্দটি নিয়েই বিরাট অস্বস্তি আমাদের। আসন্ন রমজান আমাদের সামনে বাজারকে তীব্র রকমের অস্বস্তিকর করে তুলবে বলে সবার আশঙ্কা। এরই মধ্যে ছোলা ও খেজুরজাতীয় খাদ্যপণ্যের ওপর রমজানের আবহ শুরু হয়ে গেছে! বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর সরকার কর হ্রাস করলেও ডলারের মূল্যের অজুহাতে সেসব পণ্যের মূল্যহ্রাস তো দূরের কথা স্থিতিশীলই থাকছে না। বরং রমজানের সময় যেসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তার দাম আগেই সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে সাধারণের মধ্যে কেবল অস্বস্তি নয়, সীমাহীন আতঙ্কও ঘুরপাক খাচ্ছে! এ অবস্থায় রমজানের আগে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক–সেই প্রত্যাশা সকলের।