রফতানি বৃদ্ধিতে বাস্তবসম্মত উত্তরণ কৌশল নেওয়া জরুরি

| বুধবার , ৭ মে, ২০২৫ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলো হলোপোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে ৩০১ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে রফতানি হয় ২৯৯ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ডলারের পণ্য। সোমবার (৫ মে) প্রকাশিত ইপিবির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলো হলোপোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাইএপ্রিল) পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। কৃষি পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। পাট ও পাটপণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

একসময় বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মতো করে রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করত। তবে এখন আইএমএফ বিপিএম ৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী হিসাব প্রকাশ করছে। সে অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর গ্রস বা মোট রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আগামী এক বছরের দায় বাদ নিট রিজার্ভ হয়েছে ১৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তখন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। তবে করোনা পরবর্তী চাহিদা এবং রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো। আর ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলারের মতো। ডলারের দরও অনেক বেড়েছে। ওই সময়ে প্রতি ডলার ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। এখন আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকা। যদিও ব্যাংকগুলো ১২০ থেকে ১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স কিনছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, যেভাবেই হোক রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এজন্য উপায় একটাইতা হলো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় বাড়াতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এলডিসি থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য ও সেবা উভয়ের চাহিদা দমিত হওয়ায় বাংলাদেশের রফতানি আয়ও রেমিট্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্ব অর্থনীতি প্রলম্বিত মন্দায় নিপতিত হলে পণ্য ও জনশক্তি রফতানি যে নিকট ভবিষ্যতে অস্থিতিশীল থাকবে, সেটি অনুমেয়। এ অবস্থায় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথটি মসৃণ হবে না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা উত্তরণের সময়সীমা বাড়িয়ে নেয়ার কথা বলছেন। এটি আমলে নেওয়া যেতে পারে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে দেশের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় হঠাৎ করে যেন ছন্দপতন না ঘটে, সেজন্য সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে সর্বাগ্রে একটি সুপরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত উত্তরণ কৌশল নেয়া জরুরি। আলোচ্য কৌশলের আলোকে উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে এখন থেকে আলাপআলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সাপোর্ট মেজার্স (আইএসএম) আরো কিছু সময় বাড়াতে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আঞ্চলিক সংঘের সঙ্গেও মিথস্ক্রিয়া বজায় রাখা চাই। এক্ষেত্রে ভুটান, লাওস, মিয়ানমার, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, কিরিবাতি ও টোভালুর মতো দেশগুলো কী ধরনের নীতি ও পরিকল্পনা করছে, সেগুলো অনুসরণপূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি প্রয়োজন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। রফতানি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা না বাড়লে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দৃঢ় অবস্থা সম্ভব নয়, আবার সেগুলো চিরদিনের জন্য থাকবেওনা। এ বাস্তবতা মেনে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য অর্থনৈতিক কাঠামোগত রূপান্তর ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বেগবান করতে হবে, রফতানির ও প্রাতিষ্ঠানিক ঝুড়ি বৈচিত্র্যময় করতে হবে, মানবসম্পদের গুণগত মান বাড়তে হবে, বিনিয়োগের জন্য ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোর আরো উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে