বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর বাংলাদেশকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। একটি পণ্যের ওপর রপ্তানি খাতকে ধরে রাখা ঠিক হবে না। আমাদের রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সাথে রপ্তানি বাজার সমপ্রসারণ করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বুধবার ঢাকায় প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক রিলেশনস ডিভিশনের সাপোর্ট অফ সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন প্রজেক্ট আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য সুবিধা আদায় করার জন্য অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের আগেই সফলভাবে এসডিজি অর্জন করে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। এ জন্য নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু বড় বাজার রয়েছে আমাদের। আমাদের প্রতিবেশি ভারতেও আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। ভারত একটি বড় বাজার, সেখানেও রপ্তানি বাড়ছে। এজন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একশটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অনেকগুলো কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেক প্রতিষ্ঠান সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এগিয়ে এসেছে। দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করেছে। আমাদের প্রচুর দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা আসবে রপ্তানি খাতে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
আসলে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু বড় বাজার রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত একটি বড় বাজার। সেখানেও রপ্তানি বাড়ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি পণ্যের ওপর রপ্তানি খাতকে ধরে রাখা ঠিক হবে না। আয় বাড়াতে হলে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি বাজার সমপ্রসারণ করতে হবে। এ জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। আমাদের প্রচুর দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে রপ্তানি ঝুড়িতে শুধু একটি পণ্যের আধিপত্য। একটি পণ্য দিয়ে বাজার সমপ্রসারণ করা বেশ কঠিন। চীন, ভারতসহ প্রতিশ্রুতিশীল বাজারে প্রবেশের জন্য এসব দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে উদ্যোগ নিতে হবে। তাঁরা বলেন, রপ্তানি আয়ের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য রপ্তানির নতুন গন্তব্য সৃষ্টি কিংবা বিদ্যমান গন্তব্যগুলোকে কীভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রপ্তানির ঝুড়িতে বিশ্ববাজারে প্রবেশে সক্ষম এমন পণ্যের সম্ভার বাড়াতে হবে। যেমন রপ্তানি আয়ে একটি পণ্যের আধিপত্য প্রায় ৮১ শতাংশ (২০২১-২০২২)। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারের ওপর অতিনির্ভরতা আমাদের রপ্তানি খাতের অন্যতম দুর্বলতা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই আমাদের রপ্তানি পণ্য পৌঁছেছিল ১০.৪১ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ। একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একক অঞ্চল যেখানে রপ্তানি হয়েছিল বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪৪.৬০ শতাংশ। অর্থাৎ আমেরিকা ও ইউরোপীয় অঞ্চল বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৭০ শতাংশের গন্তব্যস্থল। তাই রপ্তানি বাজার সমপ্রসারণ করতে হবে, নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।