রপ্তানি পণ্যের নতুন বাজারে প্রবেশের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে

পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনা আশাব্যঞ্জক

| রবিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ১ বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে, বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সেই হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু হয় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই)। বাংলাদেশের পক্ষে যার নেতৃত্বে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ আলোচনার শেষদিন ছিল গত বৃহস্পতিবার।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশযুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউজ থেকে স্টেটসমেন্ট দিয়ে জানানো হয় বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, আজ আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সফল হয়েছি। এটা আমাদের পোশাক খাত ও এ খাতের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য সুসংবাদ।

তৃতীয় দফার আলোচনা শেষে ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন খলিলুর রহমান। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক কমানোর আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যমূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনায় তিনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, সমালোচকদের হতাশ করে।’

আসলে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা রপ্তানি খাতের জন্য একটি ইতিবাচক ও স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি সংকীর্ণ পণ্যভিত্তিক ও কিছু নির্দিষ্ট গন্তব্যনির্ভর রপ্তানিকাঠামো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিনির্ভরতা, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। তাই এ পদক্ষেপের পর বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য ও নতুন বাজারে প্রবেশের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ওপর পাল্টা শুল্কের নতুন হার এখন প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বাণিজ্যবিচ্যুতির ঝুঁকি হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানিতে বড় ধরনের বিঘ্নের ঝুঁকি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হারের এ হ্রাস আশাব্যঞ্জক হলেও আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই বা জায়গা তৈরি করে না; বরং এটি একটি সুযোগ এবং একই সঙ্গে একটি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে একটি বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্য কৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে