করোনার দুর্দিনেও দেশে রপ্তানি আয় প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ ধারা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি খাতকে করোনার অভিঘাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ইনভেস্টর্স ফোরামসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের রপ্তানি আয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম এগার মাসে ৩ হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে এগার মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, করোনায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের রপ্তানি আয়ে ধস নেমেছিল। পরবর্তীতে শিল্প কারখানা চালুর ঘোষণায় দেশের রপ্তানি খাতে প্রাণ ফিরে আসে। গত মে মাসে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের করোনাকালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২০ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২১ সালের মে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১২ শতাংশ। এর আগে গত এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় হয় ৩১৩ কোটি ডলার। ২০২০ সালের এপ্রিলে দেশের রপ্তানি নেমে গিয়েছিল মাত্র ৫২ ডলারে। কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তেই কেবল এক বছরের ব্যবধানে করোনার মাঝেও ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কারখানা খোলা না রেখে করোনাকালে সবাই পালিয়ে গেলে এ প্রবৃদ্ধি চিন্তাও করা যেতো না, এমন মন্তব্য করেছেন বিকেএমইএ’র সাবেক পরিচালক মীর্জা আকবর আলী চৌধুরী। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হলেও পরবর্তীতে নেয়া যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে গার্মেন্টস খাত শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, একই সাথে ভালো প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। তিনি বলেন, বহু বছর পর নিট পোশাকের মতো ওভেন খাতেও রপ্তানি বেড়েছে।
বিজিএমইএ চট্টগ্রামের প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পকে রক্ষায় এ খাতকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। আমাদের প্রতিটি কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কার্যক্রম চলে। আমাদের শ্রমিকরা অনেক সচেতন। তবে লকডাউনে কারখানা চালু রাখলে রপ্তানিখাত উপকৃত হবে। ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হলে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য করোনাকালে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টর্স এসোসিয়েশনের ( বেপজিয়া) চেয়ারম্যান ও প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের চেয়ারম্যান এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, করোনার প্রকোপ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো দেশের মানুষ আতঙ্কিত। গত বছরের টানা লকডাউনে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নতুন ক্রেতাদের অনাগ্রহ অনেকটা বিপাকে ফেলেছে ইপিজেডের বিনিয়োগকারীদের। গত লকডাউনের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইপিজেডের রপ্তানিকারকদের। নতুন অর্ডার সংগ্রহ এবং তা সময়মতো রপ্তানি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় নতুন করে লকডাউনের ঘোষণায় রপ্তানিকারকদের শংকিত করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ইপিজেডগুলোর কারখানায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকরা কাজ করেন। লকডাউন ও কারখানা বন্ধ ঘোষণার সাথে সাথে তারা বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করবে। এতে শুধু রপ্তানি খাতেই ধস নামবে না, করোনা সংক্রমণেও নতুন গতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, ঈদে শ্রমিকদের বেতন বোনাসের বিষয়টি রয়েছে। তাই লকডাউনে ইপিজেড খোলা রাখাসহ রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পত্র পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লকডাউনে রপ্তানি খাত স্থবির হয়ে পড়লে শুধু ব্যবসায়ীরাই নন, দেশও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, রপ্তানিখাত দেশের অর্থনীতির প্রাণ। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বন্দরসহ রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার আহ্বান জানান।