রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির পরামর্শ বিবেচনা করুন

| মঙ্গলবার , ২৯ জুন, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

মহামারি করোনার ভয়াবহ থাবায় বিপর্যস্ত দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ক্রমেই চাপ সামলে উঠছিলো। লকডাউনের মধ্যেও চলেছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এতোদিন গ্রামাঞ্চলে করোনার তেমন কোনো প্রভাব ছিলো না। ফলে কৃষি খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক থাকায় অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাতের চাপ কমেছে। খরা কাটছে রপ্তানি খাতের। রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড। তবে সামনের দিনগুলোয় দুশ্চিন্তা বাড়ছে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও বেকারত্ব নিয়ে। গত বছরের এ সময় দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির ছিল। পরে সরকারি খাতের নানা প্রণোদনা ও বেসরকারি খাতের সার্বিক প্রচেষ্টায় অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে আবারও শুরু হয়ে যায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ। এ সংক্রমণ ঠেকাতে বর্তমানে চলছে লকডাউন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে কঠোর লকডাউন। এ অবস্থায় রপ্তানি খাত বাঁচাতে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার দুর্দিনেও দেশে রপ্তানি আয় প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ ধারা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি খাতকে করোনার অভিঘাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ইনভেস্টর্স ফোরামসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, দেশের রপ্তানি আয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম এগার মাসে ৩ হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে এগার মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বলা হয়েছে, গত মে মাসে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের করোনাকালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২০ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২১ সালের মে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১২ শতাংশ। এর আগে গত এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় হয় ৩১৩ কোটি ডলার। ২০২০ সালের এপ্রিলে দেশের রপ্তানি নেমে গিয়েছিল মাত্র ৫২ ডলারে। কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তেই কেবল এক বছরের ব্যবধানে করোনার মাঝেও ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতিবেদনে কয়েক জন সংশ্লিষ্ট শিল্প-উদ্যোক্তার বিশ্লেষণ মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কারখানা খোলা না রেখে করোনাকালে সবাই পালিয়ে গেলে এ প্রবৃদ্ধি চিন্তাও করা যেতো না। করোনার প্রথম ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হলেও পরবর্তীতে নেয়া যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে গার্মেন্টস খাত শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, একই সাথে ভালো প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। বহু বছর পর নিট পোশাকের মতো ওভেন খাতেও রপ্তানি বেড়েছে। তাঁরা বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পকে রক্ষায় এ খাতকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। আমাদের প্রতিটি কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কার্যক্রম চলে। আমাদের শ্রমিকরা অনেক সচেতন। তবে লকডাউনে কারখানা চালু রাখলে রপ্তানিখাত উপকৃত হবে। ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হলে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য করোনাকালে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, স্বাধীনতার পরের বছর মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ বা ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্যই ছিল পাট ও পাটজাত। পাটের পর প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল চা ও হিমায়িত খাদ্য। যদিও মোট রপ্তানিতে এ পণ্য দুটির অবদান ছিল সোয়া শতাংশের কাছাকাছি।
৫০ বছর আগের পণ্য রপ্তানিচিত্রের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চেহারার খোলনলচে বদলে দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। পাটকে হটিয়ে পণ্য রপ্তানির শীর্ষস্থান দখল করেছে পণ্যটি। পাঁচ দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় ৯৬ গুণ বৃদ্ধি, প্রায় ৪০ লাখ গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, সহযোগী শিল্পের বিকাশসহ অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে পোশাকশিল্প। তাই এ শিল্পকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়া জরুরি। আমাদের সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং অর্থনীতিকেও রাখতে হবে সচল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে