রক্তের সুনামি বয়ে দিয়ে মির্জা চেয়েছিলেন ইয়াহিয়া–টিক্কার প্রেতাত্মা হিসেবে আবির্ভূত হতে। নৃশংস গণহত্যার নতুন রেকর্ড গড়ে শত বর্ষ জুড়ে “কিলার কিং” হিসাবে ইতিহাসে নাম লেখাতে। তার এই খায়েশ চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলায় মির্জা রকিবুল হুদার ভাষ্য হিসেবে এসেছে এইভাবে-“ও ংযধষষ ঃবধপয ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ঈযরঃঃধমড়হম . ঝড় ঃযধঃ ঃযবু ৎবসবসনবৎ সব ঃড় যঁহফৎবফ ুবধৎং.চ চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলার রায়ে মাননীয় বিচারক এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন “…..আসলে এটা হতো গণহত্যার মামলা, কিন্তু হয়েছে হত্যা মামলা। যদিও হত্যা মামলা হয়েছে, কিন্তু এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও হার মানায়। এরকম মানুষ হত্যার ঘটনা ২১ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডকেও হার মানায়।”
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস। রাজরোষে অনেক হত্যাকান্ডের বর্ণনা ইতিহাসে আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম গণহত্যাকাণ্ডের মামলায় এ গণহত্যার যে নারকীয়রূপ বিভৎসতার চিত্র উঠে এসেছে তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিরল। সাক্ষ্য–প্রমাণে নিশ্চিত হওয়া গেছে দৈবাৎ কোন হত্যকাণ্ড ঘটেনি। এটি একটি পরিকল্পিত, ঠান্ডা মাথার গণহত্যা। দায়রা জজ এবং ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় বিশেষ জজ চট্টগ্রাম জনাব মো. ইসমাইল হোসেন ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি গণহত্যা মামলার রায় প্রদান করেন। রায়ে চট্টগ্রাম গণহত্যার বিচার বিশ্লেষণে চট্টগ্রাম গণহত্যার স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে। হয়েছে পেছনের অর্থাৎ নেপথ্য কানেকশন। রায়ের পর্যবেক্ষণ এসেছে-“এই হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন তদানীন্তন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা। যিনি মামলা চলাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন। মীর্জা রকিবুল হুদার পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি ১৯৭১ সনে পাকিস্তানে স্বৈরশাসক এরশাদের সাথে অবস্থান করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বৈরশাসক এরশাদ তাঁকে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপর তার তীব্র আক্রোশ ছিল। যার বহিঃ প্রকাশ ২৪–০১–১৯৮৮ তারিখের ঘটনা।” চট্টগ্রাম গণহত্যা সংগঠিত হওয়ার আগের দিন মির্জা সিএমপি’র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছিলেন। ঐ বৈঠকেই উপস্থিত কর্মকর্তাদের অনেকেই পুলিশ কমিশনার “অ্যাকশন প্লান” এর দ্বি–মত করেছিলেন। তাদের ভর্ৎসনা করে মির্জা রকিবুল হুদা বলেছিলেন ুণড়ঁ ধৎব নষড়ড়ফু ধধিসর ষবধমঁৎবৎং, ও ংযধষষ ৎবঢ়ড়ৎঃ ধয়ধরহংঃ ুড়ঁং. ও ংযধষষ ঃবধপয ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ঈযরঃঃধমড়হম. ঝড় ঃযধঃ ঃযবু ৎবসবসনবৎ সব যঁফৎবফ ুবধৎংচ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ সিএমপি কর্মকর্তার সাথে সিএমপি কমিশনারের এ শাসানি “কোড” করা হয়েছে। এ সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনায় আরো দেখা যায় যে, পূর্বের দিনের কথা অনুযায়ী পরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
আজ লেখার সূচনা করেছি চাঞ্চল্যকর চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলার রায়ের অংশ বিশেষ দিয়ে। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত সত্য এটি। বর্বর এই গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। সে দিনে যা ঘটেছিল ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই আমরা লিখতে পারেনি। আবার অনেক বিষয় ছিল অজানা। এমনকি চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলা রুজু করা নিয়ে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। তদন্ত কমিটি হয়েছিল। রিপোর্টটি জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি। স্বৈর সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালে মামলাটি দায়ের করেন আইনজীবী শহিদুল হুদা। দীর্ঘ ২০ বছর পর মামলার রায়ের পর গণহত্যার অনেক বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। এটি একটি ঘৃন্য, নৃশংস পরিকল্পিত গণহত্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে মামলার রায়ে। পরীক্ষিত তেপ্পান্ন জন সাক্ষীর মধ্যে ষোল জন ছিলেন পুলিশ সাক্ষী। যারা ঘটনার সময় অনেক ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত থেকে ঘটনার আশেপাশে এলাকায় কর্মরত ছিলেন। অথচ সেদিন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের কোন দায়িত্বই দেননি সিএমপি কমিশনার। যার ফলে মাঠ পর্যায়ে কোন “কমান্ড” ছিল না। পুলিশ কমিশনার ওয়াকিটকির মাধ্যমে পিআই জেসি মন্ডলকে নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু তাই নয় খোদ মির্জা রকিবুল হুদা সাধারণ পোশাকে কোতোয়ালি মোড় থেকে লালীঘি এলাকার তৈরি করা পুলিশ বেস্টনী পরিদর্শন করেন। তাঁকে মুসলিম হাইস্কুল সংলগ্ন স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করতে দেখা দেছে বলে সাক্ষ্যে উল্লেখ রয়েছে। চার সেক্টরকে বিভক্ত করে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল তিন প্লাটুন পুলিশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হাজারো মানুষের স্রোত কোতোয়ালী অতিক্রম করে আসে। এ সময়ে জে.সি মন্ডলতার বা অন্য কোন সিনিয়র অফিসারকে কোনো জিজ্ঞাসা না করে পার্শ্বস্থ ফোর্সকেব জনতার উদ্দেশ্য গুলি করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশের প্রেক্ষিতে সঙ্গে সঙ্গে থাকা কনস্টেবলরা গুলি করতে থাকে ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা ও শতাধিক ব্যক্তিকে আহত করে। গোলাগুলি চলাকালীন আট দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা হ্যান্ড মাইকে বারংবার পুলিশকে গুলিবর্ষণ করতে নিষেধ করেন। কোতোয়ালী থানার তৎকালীন ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কাজী সাহাবউদ্দিন আহমদ তাঁর সাক্ষে উল্লেখ করেছেন। গোলাগুলি চলাকালে একজন কনস্টেবল তাঁর হাতে থাকা রাইফেল নেত্রীর বুকে গুলি করার জন্য তাক করে ধরলে তিনি (ওসি) সঙ্গে সঙ্গে ঐ সিপাহীকে ধাক্কাইয়া পিছনে সরাইয়া দেন ও তাঁকে পুলিশ পরিদর্শক ইছাহাক দুখু মিয়া সাহায্যে করেন। এইভাবে তিনি শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন।” পিআইজেসি মন্ডলের নেতৃত্বাধীন কিলার পুলিশ বাহিনী বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে গণহত্যা সংঘটিত করে সেদিন ক্ষান্ত হয়নি। নিহত ও আহতদের পুলিশের ট্রাকে তুলে নেয়। দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি এর তৎকালীন হাবিলদার মেজর হিসেবে কর্মরত মোঃ নুরুল হক মজুমদার তাঁর সাক্ষে উল্লেখ করেন, “ঐ দিন বিকেলে কোতোয়ালী থানার পিআই জে.সি মন্ডল একটি ট্রাকে করে ফোর্সসহ অনুমান ৭/৮ টি লাশ দামপাড়া পুলিশ লাইসে নিয়ে যান। আর আই সাহেবের অফিসের উত্তর পশ্চিম দিকে অব্যবহৃত খালি ঘরে রেখে চলে যান। অনুমান রাত ১১/১২ টার সময় জেসি মন্ডল পুনরায় সঙ্গীয় ফোর্সসহ একটি ট্রাকে করে পুলিশ লাইনে ঢুকে ও ঐ গাড়িতে পূর্বে রাখা লাশ গুলি উঠালে তিনি জেসি মন্ডলকে লাশগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানায়, শহরে লাশ বহু হয়ে গিয়েছে। পুলিশ কমিশনার সাহেব লাশগুলি বলুয়ার দীঘি শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। নুরুল হক জবানিতে বলেছেন, ঐ আটটি লাশের মধ্যে চারজন মুসলমানের অপরগুলি মুসলিম ছিল।” হাবিলদার মোহাম্মদ আলীও আদালতে একই বিবরণ দিয়েছেন। বলুয়ার দীঘি শ্মশানে সে সময়ে কর্মরত মৃতদেহ সৎকারের ব্রাহ্মণ মন্টু কুমার চক্রবর্তী লাশ পুড়ানোর বর্ণনা দিয়েছেন। সাক্ষে তিনি বলেন, “ ২৪ জানুয়ারি রাত অনুমান ১২ টা থেকে সাড়ে বারোটার দিকে প্রথমে একটি জীপ ও তাঁর পেছনে একটি ট্রাক শ্মশানে ঢুকে। জীপের মধ্যে পুলিশের অফিসার এবং ট্রাকে মৃতদেহ, ড্রাইভার, সহকারী, কয়েকজন কনেস্টবল ছিল। ট্রাকে মোট আটটি মৃতদেহ ছিল। কালু ডোমের সহায়তায় মৃতদেহগুলি পুলিশ নামায়। মৃতদেহগুলি নামানো হলে দেখেন যে, মৃতদেহ গুলি উলঙ্গ। তম্মধ্যে চারজন ছুন্নতী থাকায় তাঁরা মৃতদেহগুলি জ্বালাইতে আপত্তি করেন। পুলিশ তখন তাদের প্রতি খারাপ আচরণ করে এবং গালাগালি করে। গলা ধাক্কা দিয়ে তাকে ও কালু ডোমকে জীপের মধ্যে উঠিয়ে পুলিশ কমিশনার অফিসে নিয়ে আসেন। তখন পুলিশ কমিশনারকে বলেন ওরা মৃতদেহের কাজ না করে কাগজ চাচ্ছে এবং তাঁর নিকট ডকুমেন্ট চান। ডকুমেন্ট না দিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন যে, মন্ডল দিনের বেলাও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে যাহা হয়েছে সেইভাবে এদেরকে শেষ করে ফেল। কালু ডোম যখন পুলিশ কমিশনারের পা জড়াইয়া বলে কাজ করিয়ে দিব, আমাদিগকে মাফ করে দেন। এরপর একই জীপে করে তাদেরকে শ্মশানে আনা হয়। শ্মশানে নিয়ে লাকড়ি কেরোসিন ও এক বস্তা পাউডারসহ দুইপাশে দুই চিতায় চারটি করে আটটি লাশ কালু ডোম সাজায়। প্রথমে বাঁশের উজাল (মশাল) দিয়ে কেরোসিন ও পাউডার দেয়। এর মধ্যে ট্রাকটি চলে যায়। প্রায় ঘন্টা দুই এর মধ্যে লাশগুলো পোড়া শেষ হয়। রাত আড়াইটার দিকে ট্রাকে করে আরো আটটি লাশ আনা হয়। তাও একই কায়দায় পোড়া হয়। সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাইক্রোবাসে করে আনা হয় আরো তিনটি লাশ। এগুলো পুড়ানো হয়। তাদের বর্ণনা মতে ২৪ জানুয়ারির ঘটনায় নিহত হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান নির্বিশেষে ১৯ জনের লাশ পুড়ে ফেলার ব্যাপারে সাক্ষ্য মিলেছে। জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ডা. সৈয়দ মো. কাশেম তিনজনের ময়লা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অমানবিক ও বেদনাদায়ক হলো নিহতদের স্বজনদের কেউই তাদের আপনজনদের শেষ দেখা ও দেখতে পারেনি। যাদের লাশ রাতের আঁধারে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে পুলিশের খাতায় তাদের ফোন রেকর্ডই রাখা হয়নি। এমনকি এ মৃত্যু সম্পর্কে সেদিন পুলিশ প্রশাসন কোনো স্বীকারও করেনি। বরং ঘটনার খবর প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। প্রেসনোট ছাড়া তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা কোনো বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকেন। আর রোম সফরে থাকা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিদেশী মিডিয়ায় এ গণহত্যাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন তৃতীয় বিশ্বের দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই থাকে। অথচ সারা বিশ্ব জুড়ে ধিক্কার ধ্বনিত হয়। ফুঁসে উঠে বাংলাদেশের জনগণ। বিরোধী দলের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্ট ছিল ২৪ জানুয়ারি।
চট্টগ্রাম গণহত্যার রায়ে বিচারপতি উল্লেখ করেছেন “ঘটনার ঊংংবহপব হতে উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী হাসিনা যিনি ঋধঃযবৎ ড়ভ ঃযব ঘধঃরড়হ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যাকে হত্যা করার একটি আভাস পাওয়া যায়। ঘটনার পূর্ব রাতে ২৩–০১–১৯৮৮ তারিখ পুলিশ কমিশনার আসামি মীর্জা রকিবুল হুদার অফিসে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একটি মিটিং হয়। উক্ত মিটিং এ পুলিশ কমিশনার আসামি মীর্জা রকিবুল হুদা সভাপতিত্বে করেন। উক্ত সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল পরবর্তী দিন অর্থাৎ ২৪–০১–১৯৮৮ ইং তারিখের নেত্রী শেখ হাসিনার সভা প্রতিহতসহ হত্যার প্রচেষ্টা। আরো দেখা যায় যে, সিনিয়র পুলিশ অফিসারগণ পুলিশ কমিশনারকে এই বিষয়ে নমনীয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য পরামর্শ ও অনুরোধ জানালে মীর্জা রকিবুল হুদা খুব উত্তেজিত হয়ে তাদেরকে বলেন,“You are bloody awami leagurers, I shall report against yous. I shall teach the people of Chittagong. So that they remember me hundred years” ফলে পূর্বের দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের উপেক্ষা করে নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা আসামি জেসি মন্ডলের দ্বারা অপরাপর আসামি কনস্টেবলদের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ” শেখ হাসিনা এই দিন চট্টগ্রামে আইনজীবী সমাবেশে এবং বিকেলে বিজেএমসি’র গেস্ট গাউস নো ভিউতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে “আইনের গ্যাড়াকল” এড়িয়ে চট্টগ্রাম গণহত্যার খবর আমরা প্রকাশ করেছি। খবরের নীতিমালা অনুসারে আমরা সে সময়ে ঝুঁকি নিয়েছিলাম খবর প্রকাশ। কারণ, সরকার তথা প্রশাসন গণহত্যার বিষয়টি মানতেই নারাজ ছিল। লাশের সংখ্যা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। লাশ পুড়ানোর বিষয়টি প্রশাসন এড়িয়ে গেছে। সংবাদপত্র সে দিন ছিল সরকারের রোষের মুখে। প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সে সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক “বিচিন্তা” নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরশাদ সরকারের শাসনামলে চট্টগ্রাম গণহত্যার দায়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ১৯৯২ সালে মামলা হলেও তার গতি ছিল মন্থর। বিভাগীয় স্পেশাল পিপি এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর বিরামহীন প্রচেষ্টায় অবশেষে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি মামলার রায় হয়।রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র, আইনের চৌহদ্দি ভেদ করে চট্টগ্রাম গণহত্যার স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে। স্মরণকালের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু রাজনীতির চোরাবালিতে দিনটি হারাতে বসেছে। জাতীয় রাজনীতিতে চট্টগ্রাম গণহত্যার দিনটি মলিন এখন। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় ওরা জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্র ওদের বাঁচিয়ে রাখবে হাজার বছর।
লেখক ঃ সাংবাদিক পেশাজীবী সংগঠক, চট্টগ্রাম গণহত্যার মামলার অন্যতম সাক্ষী।