রংপুরকে হারের স্বাদ দিতে পারল না চিটাগাং কিংসও

নজরুল ইসলাম | শনিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

হারানো গেলোনা রংপুর রাইডার্সকে। এবারের বিপিএলে একেবারেই অপ্রতিরোধ্য দল রংপুর রাইডার্স। আগের সাত ম্যাচের সাতটিতেই জিতেছে রংপুর। কেউ হারের আঁচড় দিতে পারেনি। গতকাল মুখোমুখি হয়েছিল পয়েন্ট তালিকার এক নাম্বার এবং দুই নাম্বার দল। যেটি ছিল এবারের বিপিএলে চিটাগাং কিংস এবং রংপুর রাইডার্স প্রথম সাক্ষাৎ। নিজেদের মাঠে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের যে স্বপ্ন ছিল কিংসের সে পথে সবচাইতে বড় বাধা ছিল এই রংপুর। তাই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি দর্শকের বড় চাওয়া ছিল চিটাগাং কিংসের জয়। কিন্তু সেটা আর হলোনা। বরং হতাশ হতে হলো দর্শকদের। টানা আট ম্যাচে জিতে নিজেদের সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেল রংপুর। অপরদিকে হার দিয়ে বিপিএল শুরু করা চিটাগাং কিংস টানা চার ম্যাচে জিতে যে ছন্দে ফিরেছিল তাতে ছেদ ঘটাল রংপুর। সে সাথে নিজেদের মাঠে টানা পাঁচ জয়ের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তাতে ধাক্কা খেল চিটাগাং। ম্যাচের শুরুতে নড়বড় সূচনা করেও দারুণ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে রংপুর রাইডার্স তুলে নিল টানা অষ্টম জয়। ব্যাটসম্যানদের করা ১৬৪ রানকেও নির্ভরতা বানিয়ে ফেলল দলের বোলাররা। মোহাম্মদ মিথুনের দলকে ৩৩ রানে হারিয়েছে নুরুল হাসান সোহানের দল। এই জয়ের ফলে টানা আট ম্যাচে জিতে রংপুরের শীর্ষ স্থান সুসংহতই হলো। আর গতকালের হারে ৬ ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে বরিশালের সমান্তরালে এসে দাঁড়াল চিটাগাং। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে থাকায় এখনো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চিটাগাং কিংস।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা রংপুরের শুরুটা ছিল একেবারেই নড়বড়ে। পাওয়ার প্লের প্রথম ৩ ওভারে তোলে ৯ রান। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ফিরেন তৌফিক খান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রংপুর সংগ্রহ করে ৩১ রান। যা এবারের বিপিএলের পাওয়ার প্লেতে সর্বনিম্ন। তবে দ্বিতীয় উইকেটে সাঈফ হাসান এবং স্টিভেন টেইলর রানের চাকা সচল করার চেষ্টা করেন। ৫৪ রান যোগ করেন দুজন। কিন্তু এ জৃুটি ভাঙতেই আবার ধ্বস। ১৮ বলে ১৭ রান করা সাঈফকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন আলিস আল ইসলাম। পরের ওভারে নাঈম ইসলাম ফেলান স্টিভেন টেইলরকে। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে ৩৯ রান। একটি চারের পাশাপাশি তিনটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। পরের ওভারে বল করতে এসে আরাফাত সানি ফেরান পাকিস্তানি ইফতেখার আহমেদকে। এরপর দলকে টেনেছেন আরেক পাকিস্তানি খুশদিল শাহ। অধিনায়ক নুরুল হাসান তাকে ৪১ রানের জুটি গড়তে সহায়তা করলেও সেখানে নুরুল হাসানের অবদান মাত্র ৮ রান। এরপর একপ্রান্ত আগলে লড়াই করে গেছেন খুশদিল শাহ। মেহেদী হাসানের সাথে ২৮ রান যোগ করে ফিরেন খুশদিল। ফেরার আগে ২৮ বলে ২টি চার এবং ৭টি ছক্কার সাহায্যে ৫৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে আসেন। শেষ দিকে মেহেদী হাসানের ১২ বলে ১৭ এবং সাইফউদ্দিনের ৪ বলে ৮ রানের সুবাধে ১৬৪ রান সংগ্রহ করে রংপুর রাইডার্স। চিটাগাং কিংসের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেণ আলিস আল ইসলাম এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম। ১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় চিটাগাং কিংস। দলের সবচাইতে ব্যাটসম্যান ওসমান খান ফিরেন রাকিবুল হাসানকে সুইপ করে ছক্কা মারতে গিয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে দারুনভাবে এগুচ্ছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন এবং গ্রাহাম ক্লার্ক। আকিফ জাবেদের প্রথম ওভারে দুইটি ছক্কা ও একটি চারের সাহায্যে ১৬ রান নেওয়ার পর আবার মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন ইমন। দুর্দান্ত সে ক্যাচ লুফে নেন নুরুল হাসান সোহান। আর এই ক্যাচ নিতে গিয়ে আহত হয়ে মাঠও ছাড়তে হয় সোহানকে। ১৪ বলে ২টি চার আর ২টি ছক্কায় ২৬ রান করে আসেন ইমন। পাওয়ার প্লে শেষে চিটাগাং কিংসের রান দাড়ায় ২ উইকেটে ৫০। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে চিটাগাং শিবিরে বড় ধাক্কাটা দেন আকিফ জাবেদ। ওভারের দ্বিতীয় এবং পঞ্চম বলে মোহাম্মদ মিথুন এবং গ্রাহাম ক্লার্ককে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ক্লার্ক এ ম্যাচে ফিরেছেন ২০ বলে ২৩ রান করে। ৯ ওভার শেষে চিটাগাং কিংসের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৭৩ রান। এরপর ভালই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন নাঈম ইসলাম এবং শামীম পাটোয়ারী। ৫০ রানের জুটিও গড়েন দুজন। কিন্তু খুশদিল শাহ এসে ভাঙ্গেন এজুটি। যদিও নাঈমের বিপক্ষে আম্পার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে নাঈমের উইকেট তুলে নেয় রংপুর। ভাঙ্গে ৫৩ রানের জুটি। নাঈম করেন ২৪ বলে ১৯ রান। তখনো অবশ্য চিটাগাং এর ভরসা হয়ে ছিল শামীম হোসেন। কিন্তু অপর প্রান্তে ভরসা করার মত কাইকে পাচ্ছিলেননা শামীশ। এরই মধ্যে দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে আকিফ জাবেদ ফেরালেণ স্বদেশী মোহাম্মদ ওয়াসিমকে। কিন্তু দলের শেষ ভরসা হয়ে থাকা শামীম হোসেনকে ফিরিয়ে চিটাগাং এর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলেন ইফতেখার আহমেদ। শামীমের ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৩৮ রান। শেষ পর্যন্ত ১৩১ রানে থামে চিটাগাং কিংস। নিজেদের মাঠে প্রথম আর আসরে দ্বিতীয় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক চিটাগাং কিংস। রংপুর রাইডার্সের পক্ষে ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেণ আকিফ জাবেদ। ২টি উইকেট নিয়েছেন খুশদিল শাহ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুতুবদিয়া দ্বীপে নতুনভাবে বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬