যৌতুকের বলি তাসনিম

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | সোমবার , ৯ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে তাসনিম ইবনাত মীম (২১) নামে এক গৃহবধূ যৌতুকের বলি হয়েছেন। উপজেলার বরকল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আবদুল মজিদ মেম্বার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের পর গত ৫ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে ভিকটিম তাসনিমের পিতা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে তার স্বামীসহ ৩ জনকে আসামি চন্দনাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পশ্চিম এলাহাবাদ সুলতান সওদাগর বাড়ির রফিকুল ইসলামের কন্যা তাসনিম ইবনাত মীমের সাথে বরকল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আবদুল মজিদ মেম্বার বাড়ির মৃত আবদুল মজিদের পুত্র প্রবাসী বাবুল মিয়া প্রকাশ নাজিম উদ্দীনের সামাজিকভাবে বিগত ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুখেই চলছিল তাদের সংসার। ইতিমধ্যে তাদের সংসারে আসে আরহাম নামে একটি পুত্র সন্তান। তার বয়স এখন ১৭ মাস। কিন্তু তাসনিমের সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তার স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পূর্বেও স্ত্রীকে বলে যায় ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ করা না হলে তার সাথে সংসার করা সম্ভব নয়। এদিকে স্বামীর অনুপস্থিতিতেও তার শাশুড়ি ও দেবর মিলে চালাতে থাকে নির্যাতন। সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর গভীর রাতেও তার স্বামী মোবাইল ফোনে ভিডিও কল দিয়ে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এসময় সে যৌতুকের টাকা দিতে পারবেনা বলার পর শাশুড়ি ও দেবর মিলে তাকে বেধম মারধর করার এক পর্যায়ে জোরপূর্বক মুখে বিষ ঢেলে দেয়। সেই রাতে তাকে চিকিৎসাও দেয়া হয়নি। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে শ্বশুর পক্ষের লোকজন পরদিন ৩ নভেম্বর সকালে বমি ও ডায়রিয়া হয়েছে মর্মে তাকে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় বাড়িতে নিয়ে আসে। গত ৪ নভেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানানোর পর নির্যাতনের শিকার তাসনিমের পিতা রফিকুল ইসলাম ও মা ইয়াছমিন আকতার মেয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় দেখতে পান। এসময় শ্বশুর পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়। মেয়ের মুখে নির্যাতনের কথা শুনে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে পুনরায় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ওইদিন রাতেই তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরদিন গত ৫ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত শেষে গত ৬ নভেম্বর চন্দনাইশ থানা প্রশাসনের সহায়তায় রাত ৮টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে উপজেলার পশ্চিম এলাহাবাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েটিকে নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
বরকল ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাকে মেয়ে ও ছেলে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমার পারিবারিক একটি অনুষ্ঠান থাকায় এব্যাপারে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। তবে আমি উভয় পক্ষকে প্রথমে মেয়ের চিকিৎসাসহ করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন মঈন উদ্দীন বাদল
পরবর্তী নিবন্ধহার মেনে নিতে ট্রাম্পকে বুঝিয়েছেন জামাতা কুশনার