বিয়ের তিন মাসের মাথায় শ্বশুর বাড়ির যৌতুকের নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যার জন্য কালুরঘাট সেতু থেকে রাতের আঁধারে নদীতে ঝাঁপ দেন উম্মে কুলসুম সাদিয়া (১৮) নামে এক নববধূ। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। নৌকার মাঝি ও স্থানীয়রা বিষয়টি আঁচ করতে পারার সাতে সাথে দ্রুত মেয়েটি উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে কালুরঘাট সেতু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সাদিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, ভালোবেসে তিনমাস আগে বাঁশখালীর মো. সাইমুম সাগরকে বিয়ে করেছেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও পোকখালী গ্রামের মো. আলমগীর মেয়ে উম্মে কুলসুম সাদিয়া। বিয়ে পর স্বামী ও শাশুড়ির যৌতুকের নির্যাতনের কারণে গত আড়াই মাস ধরে সাদিয়া হাটহাজারীর দক্ষিণ বুড়িশ্চর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ড মুন্সি বাড়িতে তার বাবার বাসায় থাকছেন। সাদিয়ার বাবা পেশায় অটো রিকশা চালক। তার চার মেয়ে। চার বোনের মধ্যে সাদিয়া সবার বড়। সাদিয়ার স্বামী সাইমুম সাগরের বাড়ি বাঁশখালী হলেও তারা থাকেন নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভীবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায়।
সাদিয়ার বাবা মো. আলমগীর গতকাল আজাদীকে বলেন, আমার চার মেয়ে। সাদিয়া সবার বড়। আমাদের সবার অজান্তে মেয়ে সাগর ছেলেটাকে পছন্দ করে। আমাদের বড় মেয়ে–আমরা বিষয়টি মেনে নিয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে দিতে রাজি হই। বিয়েতে ছেলের পরিবার থেকে ৮ আনা স্বর্ণ দেয়ার কথা ছিল। আর আমাদের পক্ষ থেকে ফার্নিচারসহ টুকটাক যা পারি তা দিয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য উভয় পরিবারের মধ্যে কথা হয়। ছেলের পরিবার স্বর্ণ দিতে না পারায় আমাদের অজান্তে আমার মেয়েকে ছেলের মা, ছেলের বোন ফোন করে তাদের বাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রলুব্দ করে। আমার মেয়ে এভাবে চলে যাওয়ার কারণে আমরা আর ফর্নিচার গুলো দিইনি। এটার জন্য আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো। এক পর্যায়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে আমার মেয়ে আর আমার বাসায় চলে আসে।
গত সোমবার বিকালে ছেলে আমার বাসায় এসে মেয়েকে বাসার বাইরে ডেকে নিয়ে তাদের বাসায় চলে আসতে বলেন। এসময় আমার মেয়ে বলেন, তোমার বাসায় গেলে তোমার মা–বোন আমাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করবে। আমি যাবো না। এই নিয়ে তাদের দুই জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এসময় ছেলে আমার মেয়েকে বলে–তুমি যদি না যাও তাহলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা কর। এই কথা বলার পর আমার মেয়ে নাকি তার (ছেলে সাগরের) সামনে দিয়ে চলে যায়। আমরা মনে করেছি তারা দুইজনে কথা বলছে। রাত ১০টার দিকে আমরা শুনি আমার মেয়ে কালুরঘাট সেতু থেকে আত্মহত্যার জন্য ঝাঁপ দিয়েছে। ভাগ্যক্রমে মেয়ে বেঁচে ফিরেছে। হাসপাতাল থেকে আজকে (গতকাল) নিজের বাসায় নিয়ে এসেছেন জানিয়ে মো. আলমগীর বলেন, আমি গরীব মানুষ, রিকশা চালিয়ে ভাত খাই তারপরও আমার মেয়ে আমার জন্য রাজকন্যা। আমার মেয়েকে আর তার কাছে (স্বামীর বাড়িতে) যেতে দিব না।
তারা মানুষ নয়–জানোয়ার। আমার মেয়েকে তাদের বাড়িতে নেয়ার পর থেকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করছে। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই। আমার মেয়ের এখনো শরীর খুব খারাপ–স্যালাইন চলছে।