আমরা তিন বেলা ভাত খেতাম।
মাটির গন্ধে জেগে উঠত সকাল,
হাস, মুরগীতে ভরে উঠত উঠান।
কখনো খিচুড়ি, কখনো ডিমভাজা ভাত
আমরা পেট ভরে খেয়ে
বাবা চাচাদের পাত থেকে
তুলে নিতাম আরেক গ্রাস।
সেই এক টুকরো ভাতে
লুকিয়ে থাকত তৃপ্তির সবচেয়ে উজ্জ্বল রং।
ছোট্ট গাছে ঝুলে থাকত পাকা পেয়ারা,
ভেতরটা যেন রঙিন উৎসবের মতো।
ভাগ করে খেতাম সবাই মিলে,
অল্পতেই ভরে যেত মন।
পড়া শেষ করে তাড়াতাড়ি–
টেলিভিশনের সামনে
একসাথে বসতাম নাটক দেখার অপেক্ষায়।
একসাথে কাঁদতাম, একসাথে হাসতাম
একটি বাড়ি, একটি উঠান,
আর অনেকগুলো স্বপ্নীল মুখ।
মা পড়তেন বিষাদ সিন্ধু,
পাড়ার মুরব্বিরা বসতেন অলস দুপুরে।
চায়ের কাপে জমে উঠত গল্পের ধোঁয়া,
হাসির ভেতর লুকিয়ে থাকত সময়ের সহজ গতি।
পিঠা পুলি বানানোর আয়োজন থাকত হরদম।
ভোরে ঘর ভরে উঠত কোরআনের সুমধুর সুরে,
শিউলির গন্ধে জেগে উঠত কবুতর।
জোছনা রাতে উঠানে ধান ভাঙার শব্দ
মিশে যেত ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা গানে।
আমরা গোল হয়ে বসে শুনতাম কিসসা
পৃথিবীটা তখন ছিল ছোট, কল্পনা সীমাহীন–
আমরা বিলে নামতাম মাছ ধরতে।
জল ভেজা হাতে ফিরতাম ঘরে,
মন ভরে থাকত উচ্ছ্বাসে।
আমাদের জীবন ছিল সহজ,
আমাদের সময় ছিল সত্যিকারের আমাদের।
আজ অনেক কিছু বদলে গেছে।
পেয়ারা পাকে না আর সেই গাছে,
টেলিভিশনের সামনে একসাথে বসে না কেউ।
ধান ভাঙার শব্দে আর জোছনা জ্বলে না উঠানে।
খালে–বিলে নেই কোথাও মাছ।
নেই আনন্দ, কান্না হাসি আর আমার আব্বা।
আমাদের জীবনটা সরল ছিল।
আমাদের জীবনটা আমাদের ছিল।
আমাদের আব্বা আমাদের মাঝে ছিল!






