নগরীর প্রবর্তক মোড়ের একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র লুটের ঘটনা ঘটে ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা ও নূর নবী ম্যাক্সনের নাম তখন থেকে ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হলেও মূলত এর আগে থেকেই তারা আলোচনায় ছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর নগরীর বায়েজিদের ওয়াজেদিয়া এলাকায় রপ্তানির জন্য তৈরি অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের স্কুল ইউনিফর্মভরতি একটি কাভার্ড ভ্যান অস্ত্রের মুখে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নাম জড়ায় দুজনের। তখন থেকে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী চট্টগ্রামসহ সম্ভাব্য জায়গায় তাদের হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে।
২০১১ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খোঁজ মেলে ম্যাক্সনের। সিঙ্গারবিল নামক স্থানে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বায়েজিদের চালিতাতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সরোয়ার বাবলা ও আরেক সন্ত্রাসী গিট্টু মানিককে। উদ্ধার করা হয় একটি একে–৪৭ রাইফেল, একটি অটোমেটিক পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি স্থানীয় তৈরি রাইফেল এবং একটি লাইট গান। অস্ত্র উদ্ধারের এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট রায় হয়। কিন্তু যে ঘটনার পর থেকে সরোয়ার ও ম্যাক্সন আলোচনায় আসেন, রপ্তানির জন্য তৈরি স্কুল ইউনিফর্মভরতি কাভার্ড ভ্যান ডাকাতির ঘটনায় দায়ের হওয়া সেই মামলার বিচার কাজ আজও শেষ হয়নি। ঘটনার পর অতিবাহিত হয়ে গেছে ১৫ বছর। এরই মধ্যে মামলাটির ৫ আসামির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আসামি সন্ত্রাসী ম্যাক্সন ভারতে আত্মহত্যা করেছেন। আরেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা সম্প্রতি অপর একটি সন্ত্রাসী দলের গুলিতে বায়েজিদের চালিতাতলী এলাকায় খুন হয়েছেন।
২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বরের স্কুল ইউনিফর্মভরতি কাভার্ড ভ্যান ডাকাতির ঘটনায় নগরীর বায়েজিদ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলার বাদী ছিলেন মিন্টু বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি চান্দগাঁওয়ের সিঅ্যান্ডবি বিসিক শিল্প এলাকার মেসার্স খাদিজা এন্টারপ্রাইজের কোয়ালিটি কন্ট্রোলার সুপারভাইজার।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, কাভার্ড ভ্যানে করে ১১০ বস্তা স্কুল ইউনিফর্ম বায়েজিদের অনন্যা আবাসিকের রাস্তা হয়ে ফিনিশিং হাউজে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওয়াজেদিয়া এলাকায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাকে ও চালককে মারধর করে এবং কাভার্ড ভ্যানভরতি পণ্য অক্সিজেনের দিকে নিয়ে গিয়ে লুট করে। এফআইআরে বলা হয়, লুণ্ঠিত মালামালের মূল্য অর্ধ কোটি টাকার বেশি। মামলার তদন্ত শেষ করে ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর পুলিশ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। তারা হলেন রুবেল, সরোয়ার বাবলা, নূর নবী ওরফে ম্যাক্সন, জহির ওরফে জহির ড্রাইভার ও বাহাদুর। পুলিশের চার্জশিট দাখিলের পরের বছর ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। জানা গেছে, এ মামলায় দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জ গঠনও হয় দ্রুত। কিন্তু সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে সময় বেশি লেগেছে। যদি সময়মতো সাক্ষী হাজির করা যেত তাহলে মামলা আরো আগে শেষ হতো। আদালতটির বেঞ্চ সহকারী অনিরুদ্ধ দত্ত গতকাল আজাদীকে বলেন, মামলাটির ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি বছরের ২৪ মার্চ যুক্তিতর্ক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সেদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করে। সেই অনুযায়ী গত ২৪ জুন রায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন রায় ঘোষণা হয়নি। নতুন তারিখ হিসেবে ২৪ জুলাইকে ঠিক করা হয়। সেদিনও ঘোষণা হয়নি। ফের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে আগামী বছরের ১১ জানুয়ারি স্কুল ইউনিফর্ম ডাকাতি মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ম্যাক্সনের মৃত্যুর বিষয়টি আদালত অবগত আছে। তিনি ভারতে আত্মহত্যা করেছেন। সরোয়ার বাবলার বিষয়টি এখনো অফিসিয়ালি আদালত অবগত নয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নিশ্চয়ই তা জানানো হবে। বাকি তিন আসামি জামিনে আছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ডাকাতির এ মামলায় সন্দিগ্ধ আসামির তালিকায় গিট্টু মানিকের নামও উঠে আসে। তবে তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির আজাদীকে বলেন, ২৫ বছরেও মামলা শেষ না হওয়া দুঃখজনক। এখানে পুলিশ ও প্রসিকিউশনের দায় রয়েছে। মামলার প্রাণ বলা হয় সাক্ষীকে। সাক্ষীকে যদি যথাসময়ে হাজির করা না হয় তাহলে মামলা শেষ হবে না। এ এক প্রকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি। যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে মামলা শেষ করতে হবে। লম্বা সময় পরও মামলা শেষ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ এবং আসামি পক্ষ কারো ফায়দা হয় না।












