মিনিকেট, নাজিরশাইল কিংবা মোটা চালে সয়লাব বাংলাদেশের বাজারগুলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নামের কোনো ধানের আবাদ দেশের কোথাও হয় না। এগুলো কেউ আমদানিও করে না। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের ধানের মাঠ আর বাজার সয়লাব থাকে ব্রি ধানে, কিন্তু বাজারে ব্রি চাল নামে কোনো চালের অস্তিত্ব নেই। আবার দেশে বিপুল পরিমাণ হাইব্রিড ধান উৎপাদিত হলেও বাজারে হাইব্রিড ধানের চাল বা হাইব্রিড চাল বলে কিছু পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফলিত গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি ২৮ ধানকে মিলগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো কেটে, মিক্স ও ওভারপলিশ করে নানা নামে বাজারে আনছে। আমাদের এত হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয়, অথচ সেগুলো আমরা বাজারে দেখি না। আবার বাজারে যেগুলো দেখছি সেগুলো মাঠে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যে ধানটি বেশি ব্যবহৃত হয় সেটি হলো ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ধান- ব্রি ২৮।
গবেষকরা বলছেন, ধানের পুষ্টিমানের নাটকীয় পরিবর্তন হয় মেশিন কাটাকাটি আর পলিশ করার কারণে। ওভার পলিশ ও বেশি ছাঁটাইয়ের কারণে জিংকের পরিমাণ অনেক কমে যায়। এছাড়া কিছু কিছু ধানের পুষ্টি উপাদান নাটকীয় কমে যায় এবং কোনো কোনো চালে শুধু শর্করাই থাকে।
মূলত ধান থেকে বের হওয়া চাল সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাঁটাই করলে পুষ্টিমানের ক্ষতি হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ছাঁটাই করা হয় ২৫ শতাংশেরও বেশি।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফ সরকার বলেন, কোনো কোনো ধানের ক্ষেত্রে প্রোডাকশন ও ব্র্যান্ডিং দুটি আলাদা হয়ে গেছে। সেটিই কিছু চালের নামকরণের ক্ষেত্রে বিপত্তি তৈরি করেছে। ধান থেকে চাল হওয়ার পর সেটি ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। সে কারণে অনেকে নিজের ইচ্ছেমতো চালের নামকরণ করেছে এবং কিছু নাম সেভাবেই প্রচলন হয়ে গেছে।
দেশে মূলত আউশ, আমন ও বোরো এই তিন ধরনের আছে। ধানের অর্ধেকেরও বেশি হলো বোরো জাতের, যেগুলোর পরিচিত ব্রি হিসেবে। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ বলছে, এ ব্রি ধানের দুটি জাত থেকেই বেশি ধান পাওয়া যায়। অথচ বাজারে ব্রি নামে কোনো চাল নেই।
কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলছেন মিনিকেট নামটির সূত্রপাত হয়েছে ভারত থেকে আসা ধান থেকে। দেশের বাজারে বাসমতি চালেরও জনপ্রিয়তা আছে। অথচ যে ধান থেকে এটি হয় তার নাম বাংলা মতি আর বিজ্ঞানীদের কাছে এর পরিচিত হলো ব্রি ধান ৫০ হিসেবে। বাজারের সবচেয়ে সরু এই চালটি যশোর অঞ্চলে ভালো বাংলা মতি ধান ভালো হয় তবে দেশে এখনো বাসমতি নামের কোনো ধান নেই। এছাড়া বাজারে কালোজিরা, চাষি, স্বর্ণা ও মোটা চাল পাওয়া গেলে এসব নামে ধান নেই।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চালের উৎস জানতে বিশটি জেলায় সমীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয় গত জুনে। চালের উপরিভাগের আবরণে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল যাতে ছাঁটাই করে ফেলা না হয় সেটি নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। বাজারের চালে এসব উপাদান না থাকলে ভিটামিন বি-২ সহ যেসব খাদ্য ক্যালরি পাওয়ার কথা তা পাবেন না ভোক্তারা। এ উদ্যোগটি সফলতা পেলে একটি নীতিমালা তৈরি হতে পারে বলে আশা করছেন ড. হুমায়ুন কবীর।