আমাদের সোলার সিস্টেমের বাইরে প্রায় ২০০০টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন যেই গ্রহের কথা বলবো সেটি এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী আবিষ্কার। এই গ্রহটির নাম ‘৫৫ ক্যানক্রি-ই’। গ্রহটি পৃথিবী থেকে মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটা সাইজে আমাদের পৃথিবী থেকে দুইগুণ বড়, কিন্তু ঘনত্বে আমাদের গ্রহ থেকেও আট গুণ। ‘৫৫ ক্যানক্রি ই’ তার নক্ষত্রের এত কাছে যে, একটি বছর পার করতে তার লাগে মাত্র ১৮ ঘণ্টা। আরো একটি বিষয় জানলে আপনি অবাক হবেন। এই গ্রহে আপনি যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই হীরা। মানে আপনার চারদিকে হীরা আর হীরা। মূল্যবান এ রত্ন সেখানে দুর্লভ নয়। হাত বাড়ালেই মিলবে ছোট-বড়-মাঝারি নানা আকৃতির হীরা। গ্রহটি হীরায় পরিপূর্ণ। এক কথায় একে হীরার গ্রহও বলা যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা সম্মিলিত এক গবেষণায় সমপ্রতি এ গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। এক প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, মহাকাশে পৃথিবী থেকে চার হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি নক্ষত্রের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন তাঁরা। নক্ষত্রটি নিজের অক্ষে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ বার আবর্তিত হয়। ফলে এর থেকে বেশ শক্তিশালী বেতার তরঙ্গ বিচ্ছুরিত হচ্ছে। কিন্তু ওই বেতার তরঙ্গ অনুসরণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখছিলেন, তরঙ্গটি প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তনকারী ওই গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘৫৫ কেনক্রি-ই’। এর ব্যাস পৃথিবীর অন্তত দ্বিগুণ এবং ওজনে প্রায় আট গুণ বেশি। অত্যন্ত উত্তপ্ত এ গ্রহটির পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ২,১৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৩ কোটি কিলোমিটার।
গবেষক ডা. নিক্কো মধূসুদন জানিয়েছেন, এই গ্রহের পাহাড় এবং মাটি হীরা দিয়ে তৈরি। তবে, এইরকম পাথুরে হীরা বিশিষ্ট গ্রহ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। গ্রহটির তিন ভাগের এক ভাগ হীরা দ্বারা পরিপূর্ণ হতে পারে, যা পৃথিবীর ওজনের প্রায় তিনগুণ। মধুসূদন বলেন, পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন রসায়নের এরকম পাথুরে গ্রহ এটিই প্রথম। তবে কার্বন পূর্ণ এ গ্রহটি দেখে তারা ধারণা করেছেন, পৃথিবী থেকে অত্যন্ত দূরবর্তী গ্রহগুলোর রসায়ন, জলবায়ু ও পরিবেশ এরকম হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রহটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে কক্ষপথে আবর্তন করছে সে তুলনায় বেশ অনুজ্জ্বল। এই গ্রহটির তাপমাত্রাও অনেক বেশি। এটি আমাদের সৌরমন্ডলের বৃহস্পতি গ্রহের মতোই কোনো গ্যাসীয় গ্রহ হতে পারে যারা পুরোটাই কার্বনের তৈরি। গ্রহটিতে অক্সিজেন বা পানি থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে তরল হিসেবে এই গ্রহপৃষ্ঠে কার্বনের কোনো যৌগের অস্তিত্ব থাকতে পারে।