যে কোনো মূল্যে কর্ণফুলীর প্রবাহ বহমান রাখতে হবে

| শনিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২১ at ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী শুধু চট্টগ্রামবাসীর নয়, এটি সমগ্র দেশের প্রাণভোমরা। কর্ণফুলীর স্রোত, নাব্যতা ও পানি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। এ নদীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, নদীকে জীবন্ত রাখা দেশের সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। যেকোনো মূল্যে কর্ণফুলীকে দখল-দূষণমুক্ত করে তার প্রবাহ বহমান রাখতে হবে। গত ১৪ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘কর্ণফুলীর তীর দখল : এক মাসের মধ্যে বড় পরিসরে উচ্ছেদ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দখলে দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলীতে এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। ঢাকার বুড়িগঙ্গা এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে একই সাথে বড় পরিসরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘কর্ণফুলী নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে নদীর সীমানা নির্ধারণ, দখল, ভরাট ও নদীতে যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখতে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন ওই রিট দায়ের করে। উক্ত রিটের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই কর্ণফুলী নদীর সীমানা নির্ধারণ করার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও ভূমি জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। উক্ত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন আকারে তা আদালতকে জানানোরও নির্দেশ দেয়া হয়। এই ব্যাপারে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় আরএস ও বিএস রেকর্ড অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থান ও দখলদারদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করে। উক্ত তালিকার প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা ৯০ দিনের মধ্যে সরানোর নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। টানা পাঁচ দিন অভিযান চালিয়ে নগরীর সদরঘাট থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় চারশ’ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। দখলমুক্ত করা হয়েছিল ১০ একরের মতো জমি। পরবর্তীতে উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। আবারো দখলদারিত্ব শুরু করে প্রভাবশালীরা। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণায় অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।’
কর্ণফুলীর বেহাল দশা দেখে চট্টগ্রামবাসীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সীমা নেই। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা হয়েছে বারবার। কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই নি প্রশাসন, বরং নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কর্ণফুলীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। নদীর যেন কোনো মালিক নেই। মানব সৃষ্ট দূষণ, শিল্পকারখানার বর্জ্য এবং অবৈধ দখলদারিত্বে কর্ণফুলী দিন দিন হয়ে পড়ছে খর্বকায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে জীর্ণ শীর্ণ কর্ণফুলীর দুরবস্থা। বলা হয়েছে, প্রাণসঞ্চারণী ১৩টি খালসহ ৫৪টি ছোট-বড় খালের বেশির ভাগই দখল অথবা নানা অত্যাচারে বিলীন হয়ে গেছে। কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। শিল্প কারখানাগুলোর ৯০ শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট বা বর্জ্য নিষ্কাশনের পরিবেশবান্ধব কোনো ব্যবস্থা নেই।
কর্ণফুলী নদী গবেষকরা বলছেন, কর্ণফুলী সুরক্ষায় এ মুহূর্তে দু’টি বিষয় জরুরি। এক. দূষণরোধ এবং দুই. অবৈধ দখলকৃত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ। অভিযোগ উঠেছে, কর্ণফুলী ভরাট করে ভূমির ব্যবসা চলছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমির দাম বৃদ্ধির সুবাদে জমির ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এই অপতৎপরতাও বেড়ে গেছে। গবেষকদের অভিযোগ, কর্ণফুলীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিলেও সেই আদেশ লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করছে বন্দর। এই নদীর সঙ্গে ২ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, দখলদার বড় নাকি জীবন-জীবিকা বড়। শহরের সকল বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। এটি জলজ বাস্তুসংস্থানের জন্য ক্ষতি। উন্নত শহরে এসব নেই। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উদ্যোগে চসিক, চউক, ওয়াসা, বন্দর ও জেলা প্রশাসনকে দিয়ে এই নদীকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। তাই এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার যে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, তাতে আশান্বিত হয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। তিনি কতোটা শক্তি নিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারেন, সেটাই এখন দেখার পালা। আমরা তাঁর উদ্যোগের প্রশংসা করি এবং তিনি সফল হোন-সেটাও প্রত্যাশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে