যে কোনো অরাজকতা অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনে

| শুক্রবার , ৪ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

আর মাত্র কয়েক মাস পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন । নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই পক্ষ আজ বিপরীত কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান করছে। এ ব্যাপারে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বড় দুই দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছেন দেশিবিদেশি নানা মহল। কিন্তু সংলাপে বসার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। এরই মাঝে শহরে একই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হুমকির মধ্যে পড়ার আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা। এমনিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা, উন্নয়ন কাজে শ্লথগতি, বিনিয়োগে মন্দাবৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ নানা চাপে টালমাটাল দেশের অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংকট সামাল দিতে নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও শীঘ্রই স্বস্তির ইঙ্গিত নেই। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ভাঙচুরঅগ্নিসংযোগসহ নানা কর্মসূচিতে অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনীতির এই অবস্থায় হরতাল কিংবা অবরোধের মতো কর্মসূচি এলে পণ্য চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। আর তাতেই বেড়ে যাবে মূল্যস্ফীতি। অনিশ্চয়তা বাড়লে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন দেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তারা। উন্নয়ন কাজেও নেমে আসবে স্থবিরতা। আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যেও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। গত কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে তৈরি অনিশ্চয়তায় অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ তো দূরের কথা, এমন অবস্থা চলমান থাকলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় তৈরি হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যে সহিংস কর্মকাণ্ড চলমান থাকলে অর্থনীতিতে কঠিন অভিঘাত তৈরি করবে। তাঁরা বলেন, এর ফলে মূল্যস্ফীতি বিনিয়োগে সরাসরি প্রভাব পড়বে। কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে। যেকোনো অরাজকতা অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটির ‘বৈশ্বিক ঝুঁকি মানচিত্র’ প্রতিবেদনেও দেখা গিয়াছে, ‘রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কারণে চলতি বৎসরের শেষার্ধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে বৈ কমবে না। বস্তুত রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে কীভাবে আর্থসামাজিক অস্থিতিশীলতার সমপ্রসারণ ঘটে, বাংলাদেশ হতে পারে তার ‘উৎকৃষ্ট’ উদাহরণ। তাতে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও সুশাসনের ঘাটতি এমনিতেই অর্থনীতির বোঝাস্বরূপ, সেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শাকের আঁটি চাপিয়ে দিলে পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা বুঝবার জন্য বিশেষজ্ঞ হবার আবশ্যকতা নেই।’

নির্বাচন নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনী বছরে থমকে যায় বিনিয়োগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, নানামুখী চাপ অর্থনীতিতে স্পষ্ট; প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তবে এই সময়ে টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জিং। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত ২০২২২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় তা সংশোধন করে নামিয়েছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে। কিন্তু সেই লক্ষ্যেও পৌঁছানো যায়নি। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থাগুলোও কমিয়ে নির্ধারণ করেছে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন। এমন অবস্থায় নির্বাচনকেন্দ্রিক হানাহানি তৈরি হলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমে যাবে মোট দেশজ উৎপাদন। এ ক্ষেত্রে বাড়তে পারে বেকারত্ব।

অন্যদিকে রাজনীতিতে সহিংসতা বাড়লে বেড়ে যাবে পণ্যমূল্য। পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে বেড়ে যাবে দাম। এতে ক্রয়ক্ষমতা হারাবে সাধারণ মানুষ। বলা হচ্ছে, করোনা এবং যুদ্ধের কারণে এমনিতেই পণ্য সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্য যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে না পৌঁছানো যায়, তাহলে মানুষের কষ্ট বাড়বে। কৃষক বঞ্চিত হবে ন্যায্য দাম থেকে, ক্রেতাকেও বেশি দামে কিনতে হবে পণ্য।

আমরা সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সমূহ আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছি। নানা মহল থেকে বারবার অনুরোধআহ্বান সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সহিংসতা পরিহার করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা কখনোই কারো কাম্য হতে পারে না। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার কি সমাধান নেই? আমরা মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। অর্থনীতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে