যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও একবার মানুষের আস্থা জয় করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ২৭০ পার করে জয়ী হয়েছেন তিনি। আর ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হ্যারিস মাত্র ২২৩ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। তার এই হারের পেছনে কারণ কি তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর বিডিনিউজের।
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ: এবারের নির্বাচনে আমেরিকানদের কাছে প্রধান ইস্যুই ছিল অর্থনীতি। ট্রাম্প অর্থনীতি নিয়ে অনেক বেশি কথা বলেছেন। আর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার হ্যারিসের তুলনায় ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ওপরই বেশি আস্থা প্রকাশ করেছে। এ কারণেই হয়ত দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ভোটাররা সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
কমলা হ্যারিসে আস্থার অভাব: শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের শক্তিশালী সমর্থন আছে। তাদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন সবসময়ই বেশি থাকে। এই সমর্থনে কমলা হ্যারিসের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে জয় পেতে এই শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন ট্রাম্পের জন্য সহায়ক হয়েছে। তার ওপর ভোটার জালিয়াতির মতো বিষয়গুলোতে ট্রাম্পের অবস্থান পছন্দ করেছে বিপুল সংখ্যক ভোটার। এদিক থেকে হ্যারিসের ওপর তারা আস্থা রাখতে পারেনি।
হ্যারিসের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছিল কম: নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র চারমাস আগে হুট করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরে গিয়ে হ্যারিস সেই জায়গায় আসায় নির্বাচনি প্রচার চালানোর জন্য গুছিয়ে ওঠার সময় তার হাতে তেমন ছিল না। হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচার শিবিরের মধ্যেই আটকে থেকে তার বার্তা সাবলীলভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। বাইডেনের সঙ্গে নিজের নীতির ভিন্নতা স্পষ্ট করতে না পারায় তার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট হয়েছে।
হ্যারিসের ভাষণ নিয়ে হতাশা: নির্বাচনি প্রচারের সময় হ্যারিসের যোগাযোগের স্টাইল নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তার ভাষণ অস্পষ্ট বলে প্রায়ই সমালোচিত হয়েছে। বিপরীতে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল অনেক বেশি সোজাসাপ্টা এবং আবেদন সৃষ্টিকারী। ফলে নির্বাচনি প্রচারের সময় হ্যারিসের বক্তব্যে অস্পষ্টতাই হয়ত ভোটারদের হতাশ করেছে এবং তার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে।
দোদুল্যমান রাজ্যে জোরাল সমর্থন না পাওয়া: দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প আগেরবারের নির্বাচনে যা জনসমর্থন পেয়েছিলেন তার তুলনায় এবার বেশি পেয়েছেন। কিন্তু হ্যারিস এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে জোরাল সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি। আর সেটাই তার কাল হয়েছে।
কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ভোট : কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিনো ভোটারদের সমর্থনের দিক থেকেও পিছিয়ে ছিলেন হ্যারিস। যেখানে ট্রাম্প এই জনগোষ্ঠীর সমর্থন আগেরবারের চেয়ে বেশি পেয়েছেন।
আমেরিকার বর্ণবাদী ইতিহাস : আমেরিকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের একটি বাস্তবতা হচ্ছে বর্ণবাদ এবং নারীবিদ্বেষ। ১৯২০ সালের আগে নারীরা সেখানে ভোটের অধিকারই পায়নি। আর ১৯৬৫ সালে কৃষ্ণাঙ্গরা পুরোপুরি ভোটাধিকার পেয়েছে। দেশটি কেবল একবারই একজন কৃষ্ণাঙ্গকে প্রেসিডেন্ট র্নিাচিত করেছে। সেটি ছিলেন বারাক ওবামা। নারী প্রেসিডেন্ট এখন পর্যন্ত কেউ হয়নি। কৃষ্ণাঙ্গসহ অনেক আমেরিকান ভোটারই হয়ত এখনও অর্ধ–ভারতীয় এবং অর্ধ–কৃষ্ণাঙ্গ একজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়াটা অনেক বড় সিদ্ধান্তের ব্যাপার বলেই মনে করে, তা তার প্রতিপক্ষ যে–ই হোক না কেন।