যে কারণে খুন হন চা বিক্রেতা ইসমাইল

হাবীবুর রহমান | বুধবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর লালদীঘি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা মো. ইসমাইল ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে খুন হয়ে থাকতে পারেন। চা দোকান বসানো সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করেই ইসমাইলের সাথে খুনিদের এমন বিরোধের নতুন ধারণার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ইসমাইল খুনের ঘটনায় নয়ন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ব্যক্তিগত বিরোধের এ বিষয়টি সামনে এসেছে। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পথ রোধ করে ইসমাইলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার নয়ন জেলার সাতকানিয়ার বাসিন্দা। থাকতেন নগরীর কাস্টমস এলাকায়। তবে লালদীঘি সংলগ্ন এলাকায় তিনি ঘুরে বেড়াতেন। চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার পরবর্তী আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগেও নয়ন কারাগারে ছিল জানিয়ে পুলিশ জানায়, গত জানুয়ারিতে একজন হকারকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় নয়নকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চাঁদা দাবি করার পর ঐ হকার সাড়া না দেওয়ায় ছুরিকাঘাত করে বসেছিলেন তিনি। এদিকে ঘটনার পর তিনদিন অতিবাহিত হলেও ঘটনায় জড়িত বাকী দু’জন এখনো অধরাই থেকে গেছে। পুলিশ জানায়, চা বিক্রেতা ইসমাইল খুনে তিনজন অংশগ্রহণ করে।

এদের একজন নয়ন। বাকী দু’জনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে। ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, নয়ন খুবই চালাক লোক। ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি বিষয়ে তার কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সে ইসমাইলকে ছুরিকাঘাত করেছে কি না সে বিষয়েও স্পষ্ট হতে পারিনি। তবে ইসমাইলের সাথে তাদের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল এমন একটা ধারণা আমরা পেয়েছি। চা দোকান বসানো সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে এ বিরোধ ছিল। যদিও ছিনতাইয়ের উদ্দ্যেশ্যে ইসমাইলকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল, এমন তথ্যটিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই আমরা তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছি। ব্যক্তিগত বিরোধে খুন নাকি ছিনতাইয়ের উদ্দ্যেশ্যে খুন তা জানার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, খুনে অংশগ্রহণকারী বাকী দু’জনের বিষয়ে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনি বলেন, ইসমাইল খুনের ঘটনায় তার স্ত্রী নাহিদা সুলতানা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেখানেও ব্যক্তিগত বিরোধের কিছু কিছু নমুনা রয়েছে।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নয়নকে আমরা হেফাজতে নিয়েছিলাম ঘটনার রাতেই। পরে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করি। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন। খুনে জড়িত হলেও ইসমাইলকে সম্ভবত তিনি ছুরিকাঘাত করেননি। পলাতক দু’জনের কোন একজন হয়তো ছুরিকাঘাতটি করেছেন। এ দু’জনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই ছুরিকাঘাতকারী কে, ছুরিটি কোথায় সেসব তথ্য বেরিয়ে আসবে। ঠিক কী কারণে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে সে তথ্যটিও বেরিয়ে আসবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর শুক্রবার মধ্য রাতে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা ইমাইল সাইকেল চালিয়ে নগরীর লালদিঘি জেলা পরিষদ ভবনের উল্টো দিকের রাস্তা হয়ে ফিরিঙ্গীবাজারের বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় তিনজন ব্যক্তি তার পথরোধ করে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ইসমাইল লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা হলেও থাকতেন নগরীর ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায়। শহরে, বিশেষ করে লালদীঘি সংলগ্ন এলাকার ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা ছিলেন তিনি। ৯ বছর ও ৩ বছরের ছোট দুই সন্তান এবং স্ত্রী নাহিদা ইসলামকে নিয়েই তার সংসার ছিল। সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ঘটনার পরদিন শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তিনজন ছিনতাইকারী পথ রোধ করে ইসমাইলকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আঘাত করেন। এতে তার মৃত্যু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথমবার দেওয়ানহাটে হবে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত প্যাকিং ও রপ্তানি হাউস