গত বছরের ২৬ মার্চ শুরু হওয়া লকডাউন ছিল জনমানবশূন্য। রাস্তায় চলেনি গাড়ি। পথে পথে ছিল পুলিশি চেকপোস্ট। মার্কেট দোকানে ছিল প্রশাসনের অভিযান। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের লকডাউনের পদক্ষেপ মেনে ঘরবন্ধি ছিল সাধারণ মানুষ। চারিদিকে ছিল সুনসান পরিবেশ। কিন্তু সংক্রমণের হার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এখন বেশি হলেও লকডাউন মানার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আগ্রহ একেবারে ভিন্ন। গতকাল সোমবার শুরু হওয়া লকডাউনে সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ছিল প্রচুর রিকশা। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাও ছিল অনেক।
লকডাউনের সার্বিক চিত্র সম্পর্কে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণা দেওয়া হলেও অফিস, আদালত, শিল্প কলকারখানা খোলা রয়েছে। যে কারণে কিছু পরিবহন চলাচলে শৈথিল্য ছিল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সোমবার লকডাউনের প্রথম দিন নগরীর প্রায় সব এলাকার দোকানপাট ছিল বন্ধ। সকাল থেকে কিছু কিছু এলাকার মার্কেট দোকানপাট খুললেও ক্রেতা আসেনি। তবে সরকারি ঘোষনা অনুযায়ী সরকারি বেসরকারি অফিস, শিল্প কলকারখানা, গার্মেন্টস কারখানা খোলা ছিল। বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে গেছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। পণ্যবাহী লরিও বন্দরে প্রবেশ করেছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। নাসিরাবাদ এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে অফিসে এসেছি। গত বছর লকডাউনে অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার অফিসে স্বাভাবিক কাজ চলেছে। লকডাউন নিয়ে সাধারণ কারোর তেমন আগ্রহ নেই।
এদিকে প্রথমদিন হিসেবে সাধারণ মানুষের উৎসুকও কম ছিল না। সোমবার সকালে কাজির দেউড়ি এলাকায় জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পাশেই আমার বাসা। লকডাউনে গাড়িঘোড়া চলছে কিনা দেখার জন্য এসেছি। দেখছি যাত্রীবাহী বাস, টেম্পু চলছে না। অন্য সবগাড়ি চলছে।’ দুপুরে জিইসি মোড় এলাকায় গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছিলেন আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে লকডাউন সম্পর্কে অনীহা আছে। প্রশাসনের উচিত, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা। এখন লকডাউন দিয়ে কিছু দোকানপাট ও গাড়ি বন্ধ রাখা গেলেও সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ ধরণের লকডাউনে সুফল তেমন আসবে বলে মনে হয় না।’
সোমবার সকাল থেকে পূর্বঘোষিত লকডাউন শুরু হলে নগরীতে বাসসহ বেশিরভাগ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। কিন্তু সকাল থেকে প্রাইভেট কার, জিপের দখলে ছিল নগরীর প্রায় সব সড়ক। পোষাক শ্রমিক বহনের নামে কিছু গণপরিবহন রাস্তায় নামলেও তা ছিল পরিমাণে অপ্রতুল। এদিকে লকডাউনে দোকানপাট, মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা থাকলেও সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা। চলেছে ব্যাংকিং লেনদেনও। সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল কম থাকায় অফিসগামী লোকজনের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে দিনের বেলা খাবারের দোকান, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই সব বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার সকাল থেকে নগরীর প্রায়সব স্পটে ছিল অফিসগামী যাত্রীদের ভিড়। গাড়ির জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে গেছে। বাস বন্ধের সুযোগে কিছু কিছু সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা দ্বিগুণ ভাড়ায় গিয়েছেন নানান গন্তব্যে। অনেককে পণ্যবাহী মিনিট্রাক ও পিকআপে চড়তে দেখা যায়। অন্যদিকে অ্যাপসভিত্তিক যাত্রীসেবা বন্ধ থাকলেও কিছু প্রাইভেট কারকে নগরীর বিভিন্নস্থানে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। বিকেলে অফিস ছুটির সময়েও একই চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর নতুন ব্রিজ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, জিইসি মোড়, লালখান বাজার, নিউমার্কেট এলাকায় সকালে অফিসগামী মানুষের জটলা ছিল। অন্যদিকে বিকেলে অফিস ছুটির সময়ে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়, বারিকবিল্ডিং, কাস্টমস মোড়, ইপিজেড বে-শপিং সেন্টারের সামনে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশি। তবে নগরীর অন্যস্থানের চেয়ে ইপিজেড বে-শপিং সেন্টারের চিত্র ছিল ভিন্ন। ওই এলাকায় গণপরিবহনের আধিক্য ছিল বেশি। নগরীর বেশিরভাগ জায়গায় সাধারণ যাত্রীরা গাড়ির সংকটে পড়লেও ইপিজেড থেকে বের হওয়া শ্রমিক কর্মকর্তাদের সেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।