দেশের ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সেবা উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে সব হাসপাতালে এই সেবা চালু করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকরা এই সুযোগ পাবেন। এতে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হবে।
এদিকে উদ্বোধনের পর পর পটিয়া সরকারি হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল, পেকুয়া ও লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী দেখা শুরু করেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে তুলনামূলক কম ফি দিয়ে সেবা পাওয়ায় খুশি রোগী ও স্বজনরা। তবে প্রথমদিন রোগীর চাপ অপেক্ষাকৃত কম ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।
পটিয়া : সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের নির্ধারিত ফি দিয়ে বৈকালিক চেম্বারের চট্টগ্রাম জেলার একমাত্র কেন্দ্র পটিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান শুরুর প্রথমদিনে চিকিৎসা নিল ১২ জন রোগী। প্রথম দিন হাসপাতালে রোগী দেখেন চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোছাম্মৎ সুলতানা আক্তার, নাক–কান–গলা বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মানব কুমার চৌধুরী ও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ হোসেন।
এর আগে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি যুক্ত হন স্বাস্থ্য জাহিদ মালেক এমপির সঙ্গে। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুল মামুন। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. তানিয়া তাজরীন, ডা. কাজী ফারহানা নুর, ডা. মানব কুমার চৌধুরী, ডা. প্রবাল চক্রবর্তী, ডা. জয় দত্ত বড়ুয়া, ডা. সৌমেন বড়ুয়া ও ডা. মোছাম্মদ সুলতানা আক্তার। শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি বন্ধের দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালে এ সেবা পাওয়া যাবে।
হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা নিতে আসা মো. রবিন, আমজাদ হোসেন ও শান্তা ইসলাম দৈনিক আজাদীকে জানান, এটি রোগীদের জন্য বাড়তি একটি সুবিধা। এর আওতায় কম খরচে ভালো চিকিৎসা সুবিধা পাবে। তাতে প্রাইভেট হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়ে নানা হয়রানি থেকে রোগীরা রক্ষা পাবে।
কক্সবাজার : জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রথমবারের মত চালু হয়েছে সরকারি চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কক্সবাজারসহ সারাদেশের ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং পেকুয়াসহ ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ কার্যক্রম চালু হয়। ভার্চুয়ালি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোমিনুর রহমান জানান, এই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা প্রার্থী যেকোনো রোগী সরকারি নির্ধারিত মূল্যে হাসপাতালের কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। আর প্রতিজন রোগীর কাছ থেকে আদায় করা ফি থেকে সার্ভিস চার্জ কেটে নিয়ে বাকি টাকা মাস শেষে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সম্মানী হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করবেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে চার জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে ৩০ জন রোগী বৈকালিক সেবা গ্রহণ করেন। তবে এ সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচার না হওয়ায় প্রথমদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর দেখা মিলেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খাগড়াছড়ি : স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পর বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকেরা রোগী দেখা শুরু করেন। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে প্রথমদিনে রোগীর সংখ্যা কম ছিল।
হাসপাতালে তুলনামূলক কম ফি দিয়ে সেবা পাওয়ায় খুশি রোগী ও স্বজনরা। মহালছড়ি থেকে জেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন মিলন কান্তি চাকমা। তিনি বলেন, বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ার পর আমাদেরকে বলা হয় সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা হবে। এখানে ৩শ টাকা ফি দিয়েছি। বেসরকারি ক্লিনিকের তুলনায় ফি ২শ টাকা কম। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।
প্রথম দিনেই সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিনিয়র হৃদরোগ ও ডায়বেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দুল আলম কোরাইশি, অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডা. সুবল জ্যোতি চাকমা, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জয়া চাকমা, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওমর ফারুক রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। তবে চিকিৎসকরা বলছে, নতুন শুরু হওয়া এই সেবা সম্পর্কে অনেক রোগীই এখনো জানে না। তাই প্রথম দিনে রোগীর চাপ নেই।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের সিনিয়র হৃদরোগ ও ডায়বেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দুল আলম কোরাইশি বলেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেশীর ভাগ দরিদ্র। তারা এখন কম ফি দিয়ে সরকারি হাসপাতালে বিকেল বেলায় চিকিৎসা সেবা পাবেন। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত আছি।
লামা : লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে। এর আগে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. উইলিয়াম মিলনায়তনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাঈনুদ্দীন মোর্শেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবান জেলা ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ভানু মার্মা। প্রথম দিন রোগী দেখেন গাইনি কনসালটেন্ট ডা. মাকসুদা বেগম, লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ রোবীন ও কনসালটেন্ট ডা. নুর মোহাম্মদ।
এসময় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা বলেন, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিকেলেও সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া যারা সকালে ব্যস্ততার জন্য সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে পারছেন না তাদের জন্যও সুবিধা হয়েছে।