বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে এক জেলেকে মেরে পানিতে ফেলে দিয়ে ট্রলারসহ ছোট ভাইকে নিয়ে যায় বালুবাহী একটি নৌযানের ছয় শ্রমিক, পরে চার ঘণ্টার অভিযানে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, সাগরে বিভিন্ন চ্যানেলে অসংখ্য নৌযান চলাচল করে। এর মধ্যে থেকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বালুবাহী নৌযানটি (বাল্কহেড) খুঁজে বের করা ছিল কঠিন কাজ। আর নৌযানটির ব্যাপারে তথ্য হিসেবে কেবল ‘ফারহান’ নামটি তারা জানতে পেরেছিলেন। সেই সূত্র ধরে নোয়াখালীর হাতিয়ায় এমভি নাবিল ফারহান নৌযান ও ছয় শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নৌ পুলিশের কুমিরা ফাঁড়ির পরিদর্শক ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান।
হত্যার চার দিন পর শুক্রবার সীতাকুণ্ডে সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা জেলে রাম জলদাসের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩৮ বছর বয়সী রাম জলদাসের বাড়ি সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ জেলেপাড়ায়। খবর বিডিনিউজের।
পরিবার ও পুলিশ বলছে, সোমবার তিনি ছোট ভাই লিটন জলদাসের সঙ্গে নিজেদের ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে বের হন। সেদিনই সন্দ্বীপ চ্যানেলে তাদের জাল বালুবাহী এমভি নাবিল ফারহানের প্রোপেলারে পেঁচিয়ে গেলে বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে এমভি নাবিলের শ্রমিকরা রাম জলদাসের মাথায় আঘাত করে তাকে পানিতে ফেলে দেন। আর মাছ ধরা ট্রলারকে এমভি নাবিলের সঙ্গে বেঁধে লিটনকে নিয়ে তারা চলে যান। উরিরচড় যাওয়ার পর শ্রমিকরা লিটনকে ছেড়ে দেন। তখন তিনি অন্য আরেকটি বালুবাহী নৌযানের শ্রমিকদের কাছে গিয়ে মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
শুক্রবার রাম জলদাসের লাশ উদ্ধারের পর নৌ পুলিশের কুমিরা ফাঁড়ির পরিদর্শক ওয়ালী বলেন, আমরা শুধু জানতে পারি বাল্কহেডটির নামে ‘ফারহান’ আছে। তার আগে–পরে কী ছিল সেটা সঠিকভাবে জানতে পারিনি। এ শব্দ ধরেই আমাদের অভিযানে সফলতা আসে।
অভিযানের বর্ণনায় তিনি বলেন, সাগরের চ্যানেলে অসংখ্য নৌযান চলাচল করে। প্রথমে বাল্কহেডের খোঁজে সাগরের ভোলা চ্যানেলে অভিযান চালানো হয়। নৌ পুলিশের নোয়াখালী জেলার নলছিড়া ফাঁড়ির সহায়তাও নিই। পরে চাঁদপুর চ্যানেলে তল্লাশি চালিয়ে হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাটে এমভি নাবিল ফারহান বাল্কহেডের সন্ধান পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে আমরা নিশ্চিত হই এ নৌযানটির শ্রমিকরাই রাম জলদাসকে মাথায় আঘাত করে তার ছোট ভাইকে নিয়ে যায়। তখন আমরা এর ছয় শ্রমিককে হেফাজতে নেই। ওই ছয়জন হলেন আরিফ শিকদার (২৭), সাগর ইসলাম (২২), তানভীর হোসেন (২২), মো. উজ্জ্বল (২৪), রাব্বি মিয়া (২৫) ও মো. নাদিম (১৯)।
পরিদর্শক ওয়ালী বলেন, লিটনও নিশ্চিত করেন ওই শ্রমিকরাই তার ভাইকে মাথায় আঘাত করে সাগরে ফেলে দেয়। আটকের পরদিন মঙ্গলবার সীতাকুণ্ড থানায় রাম জলদাসের স্ত্রী কণিকা জলদাসের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ওয়ালীউদ্দিন আকবর বলেন, নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিন পর জোয়ারের পানিতে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে রাম জলদাসের লাশ ভেসে আসে। ভাটার সময় পানি নেমে যাওয়ায় কাদামাটিতে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় জেলেরা। পরে তাঁরা নিহত ব্যক্তির স্বজনদের খবর দেন। স্বজনদের কাছ থেকে খবর পেয়ে নৌ পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাম জলদাসের লাশ উদ্ধার করেন।