যেভাবে কাটল সুজনের ৬০ দিন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৬ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ১৮০ দিনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক পদে দায়িত্ব নেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। আজ এ দায়িত্বগ্রহণের ৬০ দিন তথা দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে। নির্ধারিত সময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রথমদিন থেকেই সক্রিয় আছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। অবশ্য কিছু কিছু সমালোচনাও আছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্প সময়ে সিটি কর্পোরেশনে ব্যাপক রদবদল করে অনিয়ম না করার বার্তা দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অনিয়ম তদন্তে কমিটিও গঠন করে দেন। পাশাপাশি স্বয়ং নাগরিক সমস্যা চিহ্নিতকরণে ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’ কমসূচি এবং ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত ও হকারদের বন্দর-কাস্টমস থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে হয়েছেন সোচ্চার। আবার তদবির করে নগরে গণপরিবহন সেবা নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও কাজ করেছেন। দুই মাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে একান্ত আলাপকালে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ছোটবেলা থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আজও করছি। আমার অন্য কোন চাওয়া-পাওয়া নাই। কারণ, আমার ছোট্ট সংসার। স্ত্রী কলেজে অধ্যাপনা করে, ভালো অংকের বেতন পায়। নিজের ঘর আছে। আমার বড় ছেলেও কলেজে অধ্যাপনা করে, তারও ইনকাম আছে। আমি মোটামুটি দু’বেলা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারছি। কাজেই বিত্ত অর্জনের কোন আকাঙ্খা নেই। মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। শহরের সক্ষমতা বাড়াতে চাই। শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমার যে অভিযাত্রা, আমার যে ক্যারাভান যে প্রচেষ্টা তার সাথে থাকার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬০ দিন পূর্ণ হবে। কিন্তু সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির কারণে অফিস করেছি ৫২ দিনের মতো। তবে প্রতিদিনই আমি যুদ্ধ করেছি। একদিকে যুদ্ধ করেছি কর্পোরেশনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় আনতে এবং দুর্নীতি রোধ করতে। অন্যদিকে চেষ্টা করেছি পরিচ্ছন্ন আবাসযোগ্য শহর করার, ভাঙা রাস্তাগুলোকে সংস্কার করার বিশেষ করে নগরের প্রাইম দুটি সড়ক তথা পোর্ট কানেকক্টিং রোড ও স্ট্র্যান্ড রোড মেরামত কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য। কতটুকু পেরেছি সেটা নগরবাসী দেখেছেন। তারপরও আমি মনে করি, শহর কিছুটা পরিচ্ছন্ন হয়েছে এবং বৃষ্টি না হলে ভাঙা রাস্তাঘাটের সংস্কার কাজ শেষ করে ফেলা যেতো। যদি অক্টোবর মাসে বৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সবগুলো সড়ক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হবো।
ক্যারাভান কর্মসূচি :
ভিন্নধর্মী কর্মসূচি ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’ নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন খোরশেদ আলম সুজন। সপ্তাহের প্রতি বুধবার নিজে স্কুটি চালিয়ে তাৎক্ষণিক নাগরিক সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানও করেন এ কর্মসূচির মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ৬টি ক্যারাভান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট কর্মসূচির প্রথম দিন বহাদ্দারহাট মোড় আরাকান সড়ক হয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত, ২ সেপ্টেম্বর ফিরিঙ্গিবাজার থেকে নজরুল ইসলাম সড়ক, সদরঘাট রোড, স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে মাঝিরঘাট হয়ে রশিদ বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত, ৯ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী মোড় থেকে আশারাফ আলী রোড হয়ে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত এবং ১৬ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর মার্কেট-বেপারীপাড়া হতে শুরু করে বড়পোল- নিমতলা পর্যন্ত, ২৩ সেপ্টেম্বর আন্দরকিল্লাহ থেকে সিরাজদ্দৌলা রোড, চকবাজার, জামালখান ও চেরাগী পাহাড় হয়ে পুনরায় আন্দরকিল্লা পর্যন্ত এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ২নং গেইট থেকে বায়েজিদ হয়ে অঙিজেন পর্যন্ত কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রশাসক বলেন, অষ্টম শ্রেণি থেকেই রাস্তায় ঘুরছি। আমার একটা ভেসপা (স্কুটি) ছিল সেটা নিয়ে ঘুরেছি, অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি এই মোটরসাইকেলে বসে। আমি দেখলাম, মেয়রের কাছে একটা লোক সাক্ষাতে এলে অনেক দূর থেকে কষ্ট করে আসেন। তাই আমি চাচ্ছি, কেউ আমার কাছে না আসুক বরং আমিই সবার কাছে যাবো। সেজন্য নগরসেবায় ক্যারাভান কর্মসূচি পালন করছি। তিনি বলেন, ক্যারাভান এটা অ্যাারাবিক কালচার। উট নিয়ে দল বেধে যখন ব্যবসায়িক দল চলে তখন সেটাকে ক্যারাভান বলা হয়। আমাদের কর্মসূচিতে কর্পোরেশনের প্রতিটি বিভাগের লোক নিয়ে একসঙ্গে ছুটে চলছি। যেখানে অসঙ্গতি দেখছি সাথে সাথে সমাধান করছি। যেটা তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব নয়, তার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিচ্ছি।
প্রশাসক বলেন, ক্যারাভানের সুফল পাচ্ছেন মানুষ । যতদিন দায়িত্বে আছি এটা অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে দিতে চাই। মানুষকে বলছি, নিজের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসুন। ফুটপাতে গাড়ি চালানো এবং পাশের নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্ন থাকুক সেটাও আপনার অধিকার। আপনারা আমাকে জানান, সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমার।
চার তদন্ত কমিটি :
জ্বালানি তেল সংগ্রহ ও বিতরণ যাচাই-বাছাই, আইসোলেশন সেন্টারের যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিতরণ ও স্থাপন এবং সেবা সংক্রান্ত, সৌন্দর্যবর্ধণ প্রকল্প এবং ডোর টু ডোর প্রকল্পের ‘অনিয়ম’ অনুসন্ধানে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় প্রশাসকের নির্দেশে। কমিটি বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে। জ্বালানি তেল ছাড়া বাকি তিনটি প্রকল্প সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে বাস্তবায়ন করা হয়। তাই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে তদন্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন গুঞ্জনও আছে। তবে প্রশংসাও আছে।
এর মধ্যে আইসোলেশন সেন্টার সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি বাড়তি দামে পণ্য ক্রয়সহ নানা অসঙ্গতি পায়। সৌন্দর্যবর্ধণ বিষয়ে ৪২টি চুক্তিপত্র পর্যালোচনা করে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এস্টেট (ভূ-সম্পত্তি) শাখা হতে কোনো নথি খোলা হয়নি। নগর পরিকল্পনা শাখার মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদিত হলেও তাদেরকে এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে মর্মে কোনো রেজুলেশন পাওয়া যায়নি।’ ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত কোন তথ্য পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও সচিবালয় শাখায় না থাকলেও প্রতি মাসে ২ হাজার ৬৫ জন শ্রমিককে ২ কোটি ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৭ টাকা বেতনও পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া জ্বালানি তেল সংগ্রহ বিতরণ যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত কমিটি নথির রেকর্ডে বাস্তবের চেয়ে দৈনিক ১৭০ লিটার বেশি ডিজেল ব্যবহার দেখানোর প্রমাণ পায়। এছাড়া বিপ্লব উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে চুক্তিবহির্ভূত যেসব স্থাপনা হয়েছে সেগুলো অপসারণ করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে প্রশাসক বলেন, অনেক অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। আমি যেদিন দায়িত্ব নিই সেদিন বলেছিলাম, আগে অনিয়ম করলেও তওবা করে ফেলেন। এখন অনেকে কাজ করছেন। অনেকে আবার অনিয়মের পথ ছাড়েনি। আড়াল থেকেও অনেকে চেষ্টা করছেন।
মাতৃসদন :
প্রশাসকের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ইপিজেড ও আশেপাশের এলাকার কর্মজীবী মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল গড়ার সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বড় কোন ফোরাম ছিল না বলার। প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে সুযোগ আসে। গত ৩ সেপ্টেম্বর মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানকে উপানুষ্ঠানিক পত্র দিই। তার সঙ্গে কথাও বলি। বন্দর থেকে শুরু করে পতেঙ্গা পর্যন্ত ও এর সন্নিহিত এলাকায় ইপিজেড, গার্মেন্টস, অসংখ্য শিল্প-কারখানা ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে থাকেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী। গর্ভবতী নারী শ্রমিকসহ অন্য রোগীদের প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা অনেক সময় সাপেক্ষ। আছে পথের ভোগান্তিও। তাই ওই এলাকায় মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ প্রয়োজন।
গণপরিবহন সেবা নিশ্চিতেও ভূমিকা :
গত ২১ সেপ্টেম্বর নগরের তিনটি রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) এর স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। চলতি মাসে আরেকটি রুটে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সার্ভিসটি চালু হওয়ার নেপথ্যেও আছেন প্রশাসক।
এ বিষয়ে প্রশাসক বলেন, গণপরিবহনের সংকট নিরসন ও গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নতকরণে ২০ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ২৩ আগস্ট বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহীকে পৃথক দুটি উপানুষ্ঠানিক পত্র পাঠাই। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে চট্টগ্রামে বাস বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপ্রেক্ষিতেই নগরের জন্য ১৭টি বাস বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি বলেন, নগরে ৬০ লক্ষ লোকের বাস। গণপরিবহনের অপ্রতুলতা ও অনুন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন কর্মমুখী লোকজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিআরটিসির বাস চালু হওয়ায় ভোগান্তির কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
আনুতোষিক ও ঠিকাদারের বকেয়া পরিশোধ :
আর্থিক সংকট থাকায় অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আনুতোষিক টাকা অর্থাৎ গ্র্যাচুইটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা র্দীঘদিন ধরে পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। যার পরিমাণ ৪৫ কোটি টাকা। একইসঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পে দেনা আছে সংস্থাটির। এর মধ্যে গত ৫ অক্টোবর ত্রিশ জনকে আনুতোষিক বাবদ এক কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের বকেয়া বিল পরিশোধে ২৯৩ কোটি বরাদ্দ চেয়ে গত আগস্ট মাসে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেন সুজন।
এ বিষয়ে প্রশাসক বলেন, আমি এসেই শুনেছিলাম, দীর্ঘদিন চাকরি করে অবসরে যাওয়া অনেকেই তাদের আনুতোষিক টাকা অর্থাৎ গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাননি। অনেকে টাকা না পেয়ে মারাও গেছেন এবং কেউ মৃত্যুপথযাত্রী। এতে আমি খুব কষ্ট অনুভব করেছি এবং আনুতোষিক প্রদানে ব্যবস্থা নিই। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে যারা অবসর নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৩০ জনকে বাছাই করে এক কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এতে নিজের কাছে কিছুটা হালকা বোধ করছি। অন্যান্য যারা আছেন তাদের কাছের ওয়াদা করেছি, যখনি কিছু টাকা যোগাড় করতে পারবো সাথে সাথে পরিশোধ করবো।

প্রশাসক বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সহযোগী ঠিাকাদারগণও সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা পাবে। তাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদেরকেও পরিশোধ করবো এবং এজন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে সরকারকে লিখেছি।
পরামর্শক কমিটি :
নগর উন্নয়নে পরামর্শ গ্রহণে সাবেক দুই মেয়রসহ ১৭ বিশিষ্টজনকে নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেন প্রশাসক। গত ২৬ আগস্ট কমিটির প্রথম সভা হয়েছে। বিশিষ্টজনদের নিয়ে এ ধরনের কমিটি গঠন করায় প্রশংসিতও হন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রশাসক বলেন, উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য পরামর্শক কমিটি গঠন করেছি। সবাই একসঙ্গে বসেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।
বন্দর থেকে হিস্যা আদায়ের চেষ্টা :
নগর উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে হিস্যা আদায়ের চেষ্টা করছেন জানিয়ে প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে সরকার যে ট্যাঙ নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ ডেভেলপমেন্ট চার্জ দিলেও সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হবে এবং নগরের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল হতে হবে না। তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বন্দর ও কাস্টমস চট্টগ্রামে। বন্দর ব্যবহার করে জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হোক পাশাপাশি আমাদেরকেও তো দেখতে হবে।
প্রশাসক বলেন, নগরের রাস্তাগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫ টন। অখচ ইপিজেড ও বন্দরকেন্দ্রিক পরিবহণগুলো ১০-১৫ টনের বেশি মালামাল বহন করে থাকে। বাড়তি চাপে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সড়ক কাঠামো উন্নয়নে তাদেরও একটি অংশগ্রহণ থাকা বাঞ্চনীয়।
রদবদল :
কাজে ‘গতিশীলতা’ বাড়াতে দায়িত্ব গ্রহণের পরপর বিভিন্ন বিভাগে ব্যাপক রদবদল করেন প্রশাসক। এর মধ্যে গত ১৯ আগস্ট পরিচ্ছন্ন বিভাগের ৮১ জনসহ ৮৩ জন, ১৭ আগস্ট ৪৬ ওয়ার্ড সচিবসহ ৪৮ জন, ১২ আগস্ট স্টেট শাখা ও প্রকৌশল বিভাগের ১৫ জন, রাজস্ব শাখার ২৪ জন ও অন্যান্য বিভাগের তিনজনকে বদলি করা হয়। সবমিলিয়ে মাত্র আটদিনে ১৭৩ জনকে বদলি করে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। একইসঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে সৃষ্টি করেন আতংক।
এ প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, যাদের বদলি করা হয়েছে তারা দীর্ঘদিন এক জায়গায় কর্মরত ছিল। দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকায় অনেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে গেছে। বদলির ফলে তাদের কাজে গতি আসবে।
বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার :
বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধারেও উদ্যোগ নেন প্রশাসক। এর অংশ হিসেবে গত ২০ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থে একটি নোটিশ জারি করা হয় রাজস্ব বিভাগ থেকে। এতে কর্পোরেশনের মালিকানাধীন যেসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে রয়েছে তাদেরকে সাতদিনের মধ্যে দখল ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় উচ্ছেদের মাধ্যমে অবৈধ দখলমুক্ত করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ আদায় করার ঘোষণা ছিল। এছাড়া অবৈধ দখলদার সর্ম্পকিত তথ্য দাতাদের নাম ঠিকানা গোপন রাখার পাশাপাশি পুরস্কার দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রশাসক বলেন, অনেক জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের সম্পদ বেদখল হয়ে আছে। সেগুলো উদ্ধার করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবো। প্রয়োজনে সেখানে আয়বর্ধক প্রকল্প করবো, দরকার হলে জনকল্যাণমূলক কাজেও ব্যবহার করা যাবে। অবৈধ দখলদার বিষয়ে ইতোমধ্যে নাগরিকরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশারজাহ যেতে পারলেন না ওরা ৭ জন
পরবর্তী নিবন্ধদুষ্কৃতকারী ব্যতীত তাদের অন্য পরিচয় থাকতে পারে না : তথ্যমন্ত্রী