যুদ্ধ বন্ধ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ফেরাতে হবে

বিশ্বনেতাদের শেখ হাসিনা

| বৃহস্পতিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে যুদ্ধ বন্ধ করে বিবদমান দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষের একে অপরের সঙ্গে সংযোগ শান্তি ও অগ্রগতির লাইফলাইন। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাতে হবে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তার আবাসস্থলের জিজিএফ কনফারেন্স হলে ‘পগ্লাবাল গেটওয়ে ফোরাম’ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের উদ্বোধনীতে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।

বাসস জানায়, বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এলডিসি থেকে বাংলাদেশের মসৃণ উত্তরণের পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের দেওয়া বাণিজ্য অগ্রাধিকার সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ইইউকে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্য, উন্নয়ন ও মানবিক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি ইইউভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিশেষ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশজুড়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় পরিবেশ এখন বাংলাদেশে বিরাজ করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের বাংলাদেশে ভালো মানের কর্মক্ষেত্রে ও সার্কুলার অর্থনীতিতে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি চলমান রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের সংকট মোকাবেলায় আরও ভালো প্রস্তুতি এবং পারস্পরিক সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভবিষ্যতের সংকটের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে। আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২০২৩ এর সাফল্য কামনা করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি ‘বৃহত্তর সংযোগ’ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে ‘সবুজ হাইড্রোজেনের’ উন্নয়ন কার্যক্রমে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশও যোগ দিতে আগ্রহী বলে তিনি অধিবেশনে জানান। তিনি বলেন, আমরা সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষতা থেকে উপকার পেতে পারি। আমাদের কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণের জন্য আমাদের কোল্ড চেইন নেটওয়ার্কগুলোতে বিনিয়োগের প্রয়োজন। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্প উৎপাদন বহুমুখীকরণে প্রচেষ্টাকে ইইউ সহায়তা করতে পারে। আমাদের আগামী দিনের ইনস্টিটিউটগুলোতে ব্যবহারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অংশীদার খুঁজছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গতিশীল তরুণ জনগোষ্ঠী ইইউ’র দক্ষতা ও প্রতিভা অংশীদারিত্ব কর্মসূচিতে যোগ দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি গ্লোবাল গেটওয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের গতিশীলতার ক্ষেত্রে তাদের ফলপ্রসূ সহযোগিতা রয়েছে। উভয়ের অভিন্ন মূল্যবোধ ও অঙ্গীকারও ইইউকে আমাদের সম্পৃক্ততার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের জন্য ৩৫০ মিলিয়নইউরো ঋণের জন্য ইআইবি’র সঙ্গে একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। বাংলাদেশইইউ সম্পর্কের পঞ্চাশ বছরপূর্তির বছরে তিনি বলেন, আমি কৌশলগত সম্পৃক্ততা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। কারণ আমাদের ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ১৫ বছরেরও কম সময়ে ৪৬৫ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। আমরা লাখো মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছি। চরম দারিদ্র্য ২০০৬ সালের ২৫.% থেকে ৫.%-এ নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি মর্যাদা থেকে উন্নীত হতে চলেছে, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, তার সরকার খাদ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি, কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, বিনা খরচে আবাসন, গ্রামীণ যোগাযোগ, দুর্যোগ স্থিতিস্থাপকতা, জলবায়ু অভিযোজন, ১০০% বিদ্যুৎ কাভারেজ, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ, শিল্প প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা জলবায়ু ঝুঁকি সহনশীলতা ও সমৃদ্ধির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক সেতবন্ধু নির্মাতা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ ১৭ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত এবং এ অঞ্চলের তিন বিলিয়ন গ্রাহকের একটি বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ দেশের।

বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও বন্দর অবকাঠামো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করিডরের অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা নেপাল, ভুটান ও উত্তরপূর্ব ভারতের স্থলসংযুক্ত অঞ্চলগুলোকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের বিমানবন্দরগুলো পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করতে পারে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ইন্দোপ্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে সংযোগ একটি সাধারণ বন্ধনমূলক উপাদান। আমরা পরিবহন নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, সবুজ জ্বালানি, ডিজিটাল রূপান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর গ্লোবাল গেটওয়ের ফোকাসের প্রশংসা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে না আনসার বাহিনী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধগ্যাস সংকটে বাড়ছে এলপিজি নির্ভরতা