যুদ্ধ নয় শান্তি চাই– এটি একটি গভীর আকাঙ্ক্ষা এবং মানবিক প্রচেষ্টা। যুদ্ধ মানব সমাজকে ধ্বংস করে, আর শান্তি মানবতাকে উন্নত জীবনের দিকে ধাবিত করে। যুদ্ধ মানেই বিভেদ, হানাহানি, আর ধ্বংস, পক্ষান্তরে শান্তি মানে মিলন, সহযোগিতা এবং সৃজনশীলতা।
‘আর যুদ্ধ নয়’। না, বিশ্বের শান্তি প্রিয় মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। তবু মানুষকে যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। বিগত সাড়ে পাঁচ হাজার বছরে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে সাড়ে চৌদ্দ হাজার যুদ্ধ। বিংশ শতাব্দীর দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে যুদ্ধ কী? যুদ্ধের ভয়াবহতা কত নির্মম। তাই শান্তিকামী মানুষরা প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতিসংঘ নামক আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর মানুষ ইরাকের যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পৈশাচিক উল্লাস। শিশুর কান্নায়, নারীর আর্তনাদে, লাশের গন্ধে ইরাকের আকাশ ভারী হয়ে উঠলেও প্রভাবশালী দেশগুলো ভ্রুক্ষেপহীন। প্রাচীনকালেও পৃথিবীতে যুদ্ধ ছিল। সে সময়কার মহাকাব্যেগুলোও যুদ্ধভিত্তিক। যুদ্ধের মাধ্যমেই এক একটি সভ্যতার জন্ম হয়েছে। হোমারের মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’ ও ‘ভডিসির’ মধ্যে প্রাচীনকালের যুদ্ধের ভয়াবহ বর্ণনা পাই। বর্তমানেও এরই ধারা অব্যাহত রেখে চলছে যুদ্ধ। প্রাচীন বর্বর যুগের অসভ্য মানুষ আজকের সভ্য মানুষ হয়ে যুদ্ধের নির্মম অর্থ জেনে গেছে, যুদ্ধ নিয়ে আর নয় প্রভুত্বের বিস্তারের বিলাসিতা। যুদ্ধ মানে আজ বিনাশ, যুদ্ধ মানে এখন মানুষের অস্তিত্বের বিলোপ। তবে আজকের মতো পারমাণবিক যুদ্ধ কিংবা আধুনিক সব সমরাস্ত্র নিয়ে প্রাচীনকালে যুদ্ধ হতো না। মুখের ভোল পাল্টানোর সাথে সাথে পাল্টে গেছে মানুষের যুদ্ধ করার উপকরন সমূহের। এক সময় মানুষ যুদ্ধ করতো নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জনা। হিংস্র জন্তু জানোয়ারের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যুদ্ধ করত। আর এখন মানুষ যুদ্ধ করে নিজের ক্ষমতা আর অস্তিত্বের অস্তিত্ব এবং নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য। পাশাপাশি অন্যকে ধ্বংস করার জন্য, অন্যের সম্পদ দখল করার জন্য ও অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্যে মানুষ যুদ্ধ করছে। এছাড়া সমপ্রসারণশীলতার জন্য ভয়ানক যুদ্ধের উদাহরণ বিশ শতকের দুটি বিশ্বযুদ্ধ। মানুষ হিংসা দ্বেষ, লোভ লালসার বশবর্তী হয়েও এখন যুদ্ধ করছে। যুদ্ধের ফলাফল কখনো ভালো হয় না। যুদ্ধের ফলে অগণিত মানুষ জনপদ ধ্বংসের পাশাপাশি দীর্যস্থায়ী প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি আজ যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ধ্বংসলীলা বাড়িয়ে দিয়েছে আধুনিক সমরাস্ত্র নির্মাণ করে। এজন্য বর্তমানে যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষয়ক্ষতি মারাত্মক ও সুদুরপ্রসারী। তাই যুদ্ধের বিপক্ষে আজ সমগ্র বিশ্ববাসী।সবার মুখে একটাই উচ্চারণ যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। সাম্রাজ্যলোভী রাষ্ট্র শাসকদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
পরিশেষে কবি আহসান হাবিবের কন্ঠে বলতে চাই– “আমাকে সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দাও / সভ্যতার সেই প্রতিশ্রতি /সেই অমোঘ অনন্য /অস্ত্র আমাকে ফিরিয়ে দাও।।