যুদ্ধে মানুষের জন্য গান ও খবর নিয়ে ইউক্রেনের শিল্পীরা

| শনিবার , ১২ মার্চ, ২০২২ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়ার বাঁধানো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চেরনিহিভ শহরের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের সেরা টেকনো ডিজেদের একজন ওলগা কোরোলোভা। একা নন অবশ্য; সঙ্গে ছিল কন্যা, তার কুকুরটি আর দুটো ব্যাগে চটজলদি যা যা ভরে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি পাগলের মতো গাড়ি চালাচ্ছিলাম। একটা বোমার বিস্ফোরণ হতে দেখলাম। তারপর থেকে মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরপাক করছিল। দূরে কোথাও চলে যেতে হবে, বাচ্চাটার জন্য। খবর বিডিনিউজের।
টানা কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে ঢুকে পড়েন কোনোলোভা। ঘটনাক্রমে ওই রাতেই তার একটি ডিজে শো করার কথা। তাতে যেসব গান বাজাবেন বলে তালিকা করে রেখেছিলেন, সেসব রেখে দেশি শিল্পীদের গান লাগাতার চালাতে শুরু করেন তিনি।
যুদ্ধে দেশের মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখতে আর বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে তুলতে ইউক্রেনের সংগীত শিল্পীদের এমন অনেক চেষ্টার কথা তুলে ধরেছে বিবিসি। ডিজে কোরোলোভা বলেন, আমি স্টেজে কাঁদছিলাম। আমি একের পর এক গান বাজিয়ে চলেছি আর কেঁদেই চলেছি। আমার জন্য সেটা কঠিন ছিল, কিন্তু আমি জানতাম আমার কিছু একটা করতেই হবে।
ডিজে পরিবেশনা থেকে যে আয় করেছিলেন, তার পুরোটাই তিনি দিয়ে দেন ইউক্রেন সেনাবাহিনী এবং জনসেবার কাজে। পরের রাতে কোরোলোভা তহবিল সংগ্রহে নিজের ইউটিউব চ্যানেলেও একটি পরিবেশনা করেন। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে এক সময় থাকত ভ্রমণ, নাইটক্লাবে ডিজে পরিবেশনার আবেদনময়ী ছবি। এখন তাতে নিয়মিত রাশিয়ার আগ্রাসী হামলার ছবি থাকে। আরও থাকে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে হালনাগাদ তথ্য।
ডিজে কোরোলোভা তার রুশ ভক্তদের কাছে এই ধ্বংসযজ্ঞের কথা পৌঁছতে চান। তিনি বলেন, রাশিয়ার মানুষ সত্য জানতে পারছে না আর তা আমাকে পীড়া দিয়ে চলেছিল। মনে হচ্ছিল তারা যেন সবরকম তথ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর কোরিয়াতে রয়েছে। রাশিয়া থেকে আমার ভক্তরা বার্তা পাঠাচ্ছিল। ওরা বলছিল, এসব সত্য নয়; সবকিছু মিথ্যা। আপনার সব পোস্ট মিথ্যা। তারা এসব কিছুই দেখতে চাইছিল না।
কোরোলোভা একা নন; মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে যে খবর মিলছিল না, যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে ইউক্রেনের অনেক সাড়া জাগানো ও উদীয়মান সংগীতশিল্পীও অনানুষ্ঠানিকভাবে সেসব খবর প্রচারের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিলেন।
লোকশিল্পী ক্রিস্টিনা সোলোভি বলেন, সবাই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ নিজ অনুসারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আমাদের শহরের ভেতরে যা ঘটছিল তা ছড়িয়ে দিচ্ছি। আমরা রাশিয়ার মানুষদের কাছে পৌঁছতে চাই, যেন তারা সমাবেশে যোগ দেয়। তাদেরকে বলতে চাই, এটা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন।
ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইল ছবিতে শত শত ইউক্রেনীয় শিল্পী দেশের পতাকা লাগিয়েছিলেন। তার সঙ্গে বড় বড় করে লেখা ছিল কিছু কথা, আপনি যখন এই ভিডিওটি দেখছেন, তখন রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনে মানুষ মরছে; এসব বন্ধ করুন।
ওকিয়ান এলজি একটি ইউক্রেনীয় রক ব্যান্ড। এর সদস্য এসভিয়াটোস্ল্যাভ ভাকারচুক প্রতি ঘণ্টায় যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতির তুলে ধরছেন। একটি ভিডিও পোস্টে তাকে দেখা যায় হাসপাতালে আহত সৈন্যদের পাশে। আরেকটি ভিডিওতে তিনি বুলেট প্রতিরোধী পোশাক পরে খারকিভের সড়কে বক্তৃতা দিচ্ছেন। গাড়ি নিয়ে খাবার ও তেল পৌঁছে দিতেও দেখা গেল তাকে একটি ভিডিওতে। তিনি বলেন, বিশ্বের এই অংশে আমার একটি পরিচিতি আছে। আর আমি এটাকে কাজে লাগিয়ে যা যা করা সম্ভব তা করতে চাইছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউক্রেনের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে : পুতিন
পরবর্তী নিবন্ধট্রলার থেকে আইসসহ ৬ মিয়ানমার নাগরিক আটক