যুদ্ধে নিহত ইরানিদের গণজানাজা, তেহরানে মানুষের ঢল

বাপের কাছে ছুটে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না : মার্কিন হামলা নিয়ে ইসরায়েলকে কটাক্ষ ইরানের

| রবিবার , ২৯ জুন, ২০২৫ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলের সঙ্গে আকাশ যুদ্ধে নিহত ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও কিছু বেসামরিকের জানাজা রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার নিহতদের শেষ বিদায় জানাতে তেহরানের রাস্তায় কালো পোশাক পরা ইরানিদের ঢল নামে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, যাদের জানাজা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন বিজ্ঞানী ও ১০ জন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার আছেন। নিহত সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমান বাহিনী প্রধান জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ। খবর বিডিনিউজের।

রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের কফিনগুলো গাড়িতে করে তেহরানের আজাদি স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। কফিনগুলো ছবি ও জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো ছিল। জানাজায় যোগ দিতে আসা কিছু মানুষ কফিনগুলো ছুয়ে তাদের আবেগ প্রকাশ করছিলেন ও গোলাপের পাপড়ি ছিটাচ্ছিলেন। পরে আজাদি স্কয়ারে নিহতদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ‘ক্ষমতার শহীদদের মিছিল’ নামের এই শেষকৃত্য যুদ্ধে নিহত ৬০ জনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়, তাদের মধ্যে চারজন নারী ও চারজন শিশু ছিলেন। জানাজায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অন্যতম উপদেষ্টা আলি শামখানি, খামেনির ছেলে মোজতাবাসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইসরায়েলি হামলায় শামখানি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। নিহতদের শেষ বিদায় উপলক্ষ্যে আরাকচি টেলিগ্রাম পোস্টে একটি বিবৃতি দিলেও সর্বোচ্চ নেতা খামেনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিবৃতি দেননি। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে খামেনি আর প্রকাশ্যেও আসেননি। এর আগে বিভিন্ন হামলায় নিহত ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের জানাজায় খামেনিই ইমামতি করেছিলেন। ১৩ জুন ইসরায়েলের প্রথম হামলায় শীর্ষ সামরিক কমান্ডার বাঘেরি, সালামি ও হাজিজাদেহ নিহত হন। বাঘেরিকে গতকাল তেহরানের নিকটবর্তী বেহেশত জাহরা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সালামি ও হাজিজাদেহকে আজ রোববার দাফন করা হবে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার অস্ত্ররিবতি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানে ৬১০ জন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন ৪৭০০ জনেরও বেশি।

বাপের কাছে ছুটে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না’ : ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ‘কুৎসিত ও অপমানজনক’ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছি, ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন দাবি করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘অশোভন ও অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সএ গতকাল শনিবার আরাগচি লিখেছেন, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যিই একটি চুক্তি চান, তাহলে তার উচিত হবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মহান আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য ভাষা পরিহার করা এবং তার কোটি কোটি ভক্তসমর্থকের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বন্ধ করা। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে ইসরায়েলি শাসকদের তাদের ‘ড্যাডির’ কাছে ছুটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। মহান ও শক্তিশালী ইরানি জনগণ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা হুমকি আর অপমান সহজভাবে নেয় না।

মার্কিন হামলা নিয়ে ইসরায়েলকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কটাক্ষ এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র তেহরানকে ফের আলোচনার টেবিলে ফেরাতে চাইছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তবে তাদের হামলা কতটুকু কার্যকর ছিল, তাতে ওই স্থাপনাগুলোর কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি, লিখেছে প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা। ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্ফাহানে ওই হামলার মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ইরানে ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার পাল্টায় ইরান পরে কাতারের এক মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মারে। তবে আগেভাগে জানিয়ে দেওয়ায় তাদের ওই পাল্টা হামলায় ঘাঁটিটির তেমন কোনো ক্ষতিই হয়নি, কারও হতাহতেরও খবর পাওয়া যায়নি।

ট্রাম্পের যে মন্তব্য নিয়ে আরাগচি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত শুক্রবার সেটি করেছেন তার নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে। সেখানে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, খামেনি অকৃতজ্ঞ। বলেছেন, তিনি ইরানি এ নেতাকে গুপ্তহত্যার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। ‘আমি ঠিকঠাক জানতাম কোথায় তিনি লুকিয়েছেন। কিন্তু ইসরায়েল কিংবা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ও সবচেয়ে শক্তিশালী মার্কিন বাহিনীকে তার জীবন নিতে দিইনি। আমি তাকে খুবই কুৎসিত ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছি। তার ‘ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প’ বলার দরকার নেই।’

সামপ্রতিক দিনগুলোতে তিনি ইরানের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নিয়েও কাজ করছিলেন বলে জানান এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, কিন্তু না, এর বদলে আমি পেলাম ক্ষোভ, বিদ্বেষ আর ঘৃণাভরা সব বিবৃতি, তাৎক্ষণিক আমি নিষেধাজ্ঞা শিথিলসহ আরও কিছু করার সব কাজ বন্ধ করে দিলাম। তিনি তার পোস্টে ইরানকে ফের আলোচনায় বসারও তাগাদা দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপার্বত্য চট্টগ্রামে বিলুপ্তির পথে সাম্বার হরিণ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিবন্ধী শিশুকে আশ্রয় দিয়ে বিপাকে নৈশ প্রহরী