যুদ্ধরায় ত্রিপুরা। দীঘিনালার ১নং মেরুং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নয়মাইল যৌথ খামার তার ঠিকানা। ঝুঁপড়ি ঘরই তার একমাত্র সম্বল। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৭৮। তবে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তার। একাকী সংগ্রামের জীবন তার। তবে জীবনযুদ্ধে ‘পরাজিত’ যুদ্ধরায় ত্রিপুরা। সংসারের কিছুই নেই।
একমাত্র কন্যার বিয়ের পর অভাবের সংসারে স্ত্রীসহ দিন কাটছিল। কিন্তু স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে পুনরায় সংসার পাতেন যুদ্ধরায়। অভাবের সংসারে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দিতে না পারায় সেও অসুস্থ যুদ্ধ রায়কে একা ফেলে চলে যায় বাপের বাড়ি। সেই থেকেই একা জীবনে যুদ্ধরায়। তার বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ যুদ্ধরায়ের নিদারুণ কষ্টের দিবারাত্রি। একটি জরাজীর্ণ ছাউনির নিচে খেয়ে না খেয়ে দিনরাত যাপন করছেন তিনি। এ যেনো ‘অভাগার’ কেউ নেই এমন। যুদ্ধরায় ত্রিপুরা যেন জীবনের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। তার ঝুঁপড়িতে শোবার মতো খাট বা চকি নেই। মাটিতে পাতা আছে একটি ছেড়া মাদুর। ঘরের ভিতরের কোন আসবাবপত্র নেই। ঝুঁপড়ি চাল ফুটো হয়ে গেছে। শীত বর্ষায় অবস্থা আরো বেগতিক হয়। ঘরের ভিতরে সহসায় হু হু করে ঢুকে পড়ছে মাঘের কনকনে বাতাস। এভাবে দিনরাত পার করছে যুদ্ধরায় ত্রিপুরা।
তিনি জানান, আমি জীবনযুদ্ধে পরাজিত একজন মানুষ। একটি সুন্দর গৃহ ও আয়ের কোন উৎস না থাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীও আমাকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে চলে গেছে। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের ঘর উপহার দিচ্ছেন। তাই আমাকেও একটি ঘর দিলে জীবনের শেষ বয়সে একটু পূর্ণতা পেতাম। এলাকাবাসী জানান, এই এলাকার সবচেয়ে গরীব ও অসহায়দের অন্যতম একজন হলেন যুদ্ধরায় ত্রিপুরা। তাকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি গৃহ প্রদান করা হোক। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য গনেশ চন্দ্র ত্রিপুরা জানান, আমাদের গ্রামে দেড়শ পরিবারের বসবাস। কিন্তু কেউ ঘর পায়নি। যুদ্ধরায়ের ঘর ও আয়ের উৎস না থাকায় স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বিষয়টি খুবই দু:খজনক। আমরা তাকে বয়স্ক ভাতাভোগীর আওতায় এনেছি। তবে ঘর না থাকায় তিনি ঝড় বৃষ্টির দিনে আরো অসহায় হয়ে পড়েন। ঘর নির্মাণের জন্য তিনি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।