যুদ্ধবিরতি, সাত সপ্তাহ পর শান্ত গাজা

২৪ জিম্মিকে ছাড়ল হামাস, ঢুকেছে ত্রাণবাহী ট্রাক

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

গাজায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে ৭ সপ্তাহের লড়াইয়ের পর গতকাল শুক্রবার প্রথম শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতিতে বড় কোনও বোমা, বিমান হামলা কিংবা রকেট হামলার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। লড়াইয়ে বিরতির এই সময়ে মিশর থেকে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে গাজায় ঢুকেছে অন্তত ৬০ ট্রাক ত্রাণ। খবর বিডিনিউজের।

হামাস কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় আলাদা একটি চুক্তির আওতায় ১০ থাই জিম্মিসহ ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার পর ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকেও মুক্তি দিয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এর আগে ১২ থাই নাগরিকের মুক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। পরে এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের মধ্যে ১৩ ইসরায়েলি ছাড়াও আছে ১০ থাই নাগরিক এবং একজন ফিলিপিনো। রেডক্রসও এই ২৪ জিম্মির মুক্তির খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে। ওদিকে, ইসরায়েল ১৩ জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ৩৯ ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে। এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আছে ২৪ জন নারী এবং ১৫ কিশোর। এদেরকে বিচারের আগে ইসরায়েলের জেলে আটকে রাখা হয়েছিল।

ইসরায়েল জানায়, যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় ৮টি ট্রাকে করে ঢুকেছে জ্বালানি। বাকি ট্রাকগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং খাবার পৌঁছেছে। এর আগে এ সপ্তাহের শুরুর দিকে যুদ্ধ চলার সময়ে ত্রাণ ঢুকতে না পারার কারণে সেখানকার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বিপর্যয়ের মুখে থাকার সতর্কবার্তা দিয়েছিল জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)

গতকাল যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে গাজার মানুষ। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস শহরে মানুষ বাড়ির বাইরে রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের ওপরই ঘোরাফেরা করছে। যুদ্ধের মধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে আসা মানুষেরা অন্তত সাময়িকভাবে হলেও তল্পিতল্পা নিয়ে আবার বাড়ি ফেরার আশায় আছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা হাসিমুখে তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন, আমি এখন খুবই খুশি। স্বস্তি পাচ্ছি। আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আমাদের হৃদয় প্রশান্তি পেয়েছে। কোনও খাবার, পানি ছাড়া বসে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত। বাড়ি গেলেই আমরা বাঁচি। চা পান করা যাবে, রুটি বানানো যাবে।

উত্তর গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শুরুর পর চোখে পড়েনি কোনও জঙ্গিবিমান। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যেখানে অহরহই জঙ্গি বিমান থেকে বোমা পড়েছে। বিমান হামলা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি স্থলভাগেও কোনও বিস্ফোরণ ঘটেনি কিংবা শোনা যায়নি হামাসের ছোড়া কোনও রকেটের শব্দ। কেবল বিকালে এক জায়গায় ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা গেছে। মাঝে মাঝে গুলি চলা এবং অন্যান্য ছোটখাট ঘটনা ঘটার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে ইসরায়েল এবং হামাস। গাজার উত্তর প্রান্ত থেকে সরে যেতে দেখা গেছে সারি সারি ইসরায়েলি ট্যাংক। ওদিকে, দক্ষিণের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছে ত্রাণবাহী ট্রাক। বিকালে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার আগে আলাদাভাবে ১১ জনকে মুক্তি দেয় হামাস।

মিশরের স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিস জানিয়েছিল, মিশরের অনেক প্রচেষ্টার পর ওই ১১ নাগরিকের মুক্তি মিলেছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এই জিম্মিদের মুক্তি কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতির অংশ নয়। এদের মুক্তির পরই ইসরায়েলের গণমাধ্যম জানায়, হামাসের হাতে জিম্মি ১৩ ইসরায়েলি নারী ও শিশুকে গাজায় রেডক্রসের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদেরকে মিশরের সঙ্গে গাজার রাফাহ সীমান্ত পারাপার এলাকায় নেওয়া হয়। এই সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলি জিম্মিরা মিশরে ঢুকেছে জানিয়েছেন মিশরের কর্মকর্তারা।

রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্টের কাছ থেকে মিশরীয় কর্মকর্তারা তাদেরকে গ্রহণ করেন। এরপর ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের তাদেরকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ইসরায়েলের জেলে বন্দি অন্তত ১৫০ ফিলিস্তিনির বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক শিশু ও নারীসহ ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেওয়ার জন্য চার দিনের এই যুদ্ধবিরতি করতে গত বুধবার রাজি হয় হামাস এবং ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জন জিম্মিকে চার দিনে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর বৃহস্পতিবার কাতার জানায়, শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শুরুর দিনেই ১৩ ইসরায়েলি জিম্মির প্রথম ব্যাচ মুক্তি পাবে।

হামাস এরই মধ্যে এই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী, এর বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলে থাকা ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দিয়ে পশ্চিম তীরে পাঠানো হচ্ছে।

৭ অক্টোবর গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা সবাইকে হতবাক করে দেয় এবং সাধারণ ইসরায়েলিরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। সেই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ওই দিন প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে রাখে হামাস। এরপর মাত্র ৫ জন মুক্তি পেয়েছিল। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রায় সবদিক থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। তাদের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গোলা হামলায় ১৪ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী ফিলিস্তিনি নিহত হয়, এদের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবদলি ইস্যুতে আলোচনায় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র নিলেন যারা