আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ‘ঐক্য ধরে রাখতে’ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার বিকালে গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি ও ন্যাপের (ভাসানী) সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করে দলটি।
পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে বলেন, দেশের চলমান অবস্থা, বিভিন্ন শিল্প–কারখানায় ‘মহল বিশেষের’ অপতৎপরতা, ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ও আগামী নির্বাচনসহ অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে এই প্রথম যুগপৎ আন্দোলনের যেসব দল ছিল, তাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। যুগপৎ আন্দোলনে গড়ে ওঠা ঐক্যকে আমরা অটুট রাখতে চাই। খবর বিডিনিউজের।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বছরখানেক আগে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, একাদশ সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সমমনা দলগুলোও তখন দলটির এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানায়। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর চতুর্থ দফায় ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তার সাত মাসের মাথায় কোটা সংস্কার থেকে শুরু হওয়া তুমুল গণআন্দোলনে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সরকারপতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে ‘নানা ষড়যন্ত্র’ চলছে মন্তব্য করে খসরু বলেন, আপনারা দেখতে পারছেন, বিভিন্ন মিল–ফ্যাক্টরি, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ওষুধ কারখানাগুলোতে ষড়যন্ত্র করে সেগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এখানে পেছন থেকে কারা এসব করছে, সেটা আমরা সবাই জানি। এসব করে যারা দেশকে অস্থির করতে চাচ্ছে, আমাদের দেশের অর্থনীতিকে অস্থির করতে চাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকবে। দেশটা যাতে স্থিতিশীল থাকে সেজন্য আমরা এক সাথে কাজ করছি। তিনি বলেন, পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, সেটার জন্য আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি।
‘৩১ দফা সংস্কার’ প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে এ বিএনপি নেতা বলেন, এই ৩১ দফা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব। কারণ জনগণ এই সংস্কার চায়।
গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আপনারা জানেন বিগত সরকার যারা সংবিধানকে এমনভাবে ব্যবহার করেছে, প্রশাসনকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, এতে রাষ্ট্রের কাঠামোটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সম্মিলিতভাবে আমরা জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এগুলোকে নির্মূল করতে চাই। তার ভাষ্য, জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। আমরা কোনো অবস্থাতে ছাত্র–জনতার যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, সেটা আমরা ধরে রাখতে চাই। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সামনে রেখে আজ ২৪ এর বিজয়কে নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই, জাতির একটা সুন্দর জিনিস উপহার দিতে চাই।
বৈঠকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির সহসভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু ছিলেন। এছাড়া পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, ন্যাপের (ভাসানী) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম নিজ নিজ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।