যুক্তিহারা মানুষ ধর্মকে স্বার্থের হাতিয়ার বানায়

‘সম্প্রীতি বুনন’ ডায়ালগ প্রোগ্রামে বক্তারা

| রবিবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

‘অন্ধ আত্মস্বার্থপরতা মানুষের মনুষ্যত্বকে পেছনে ফেলে পশুত্বকে অগ্রগামী করে। ব্যক্তি তখন নিজেকেই সঠিক আর অন্যকে বেঠিক মনে করতে থাকে। এমন অবস্থায় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির স্বার্থের সংঘাত শুরু হয়, যুক্তিবোধ হয়ে পড়ে অসহায়। এতে সমাজে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। মানুষ হয়ে ওঠে মানুুষের শত্রু। অনিরাপত্তা তখন সমাজকে গ্রাস করে। যদিও ধর্ম তখন মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে, কিন্তু যুক্তিহারা মানুষ ধর্মকেও নিজের স্বার্থের হাতিয়ার বানায়। শুরু হয় চরম হানাহানি, সংঘাত, সহিংসতা আর অশান্তি।’
কালটিভেশন অফ সেক্যুলার মাইন্ড (সম্প্রীতি বুনন) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘ডায়ালগ’ প্রোগ্রামে উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়। গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি হলে এ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, চবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর মনজুরুল আলম ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সুভাষ দে।
‘সম্প্রীতি বুনন’ শীর্ষক প্রকল্পের নেতৃত্বদানকারী চবি দর্শন বিভাগের শিক্ষক মাছুম আহমেদ অনুষ্ঠানে ‘ডায়ালগ’ শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। তিনি সহনশীল সমাজ বিনির্মাণে ডায়ালগ’র গুরুত্ব উপস্থাপন করেন। প্রকল্পের পরিচালক শান্তিকর্মী সনৎ কুমার বড়ুয়া ও শাসন বড়ুয়া কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, সম্প্রীতি বুনন আমাদের কেন করতে হচ্ছে? কারণ আমাদের কোনো কোনো জায়গায় সম্প্রীতিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। কিন্তু এটা এমনটা কথা ছিল না। একশ বছর আগে দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাশ এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় সম্প্রীতির যেই বীজ রোপিত হয়েছে আমরা সেই বাগানের পরিচর্যা করতে পারিনি। অপরাজনীতির প্রতিফলন আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে ঢুকেছে। সেটি থেকে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে এবং আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। প্রফেসর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রত্যেকে যদি মানবিক কাজে নিয়োজিত হই কিংবা মানবিক কাজের সহযোগী হই তবেই সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। প্রফেসর মনজুরুল আলম বলেন, শিশুর মানস গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনন্য। তিনি অভিভাবকদেরকে সন্তানের মানবিক মানস গঠনের কারিগর হিসেবে আখ্যায়িত করে নতুন প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পথে আহ্বান জানান। সাংবাদিক সুভাষ দে আত্মস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে অপরাপর মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ প্রায় ৫০ জন তাদের মতামত তুলে ধরেন। তারা প্রত্যেকেই প্রাণ খুলে কথা বলেন এবং আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউএসটিসি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা
পরবর্তী নিবন্ধমাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান