যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা

শুল্ক ইস্যু, ট্রাম্পকে চিঠি দেবেন ইউনূস

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের স্বার্থ বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে নন ট্যারিফ বাধা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টারা। তারা বলছেন, আমরা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যাতে আরও বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি। সেটা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সরকারের আরও তিন উপদেষ্টা, বেশ কয়েকজন সচিব, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বৈঠকে অংশ নেন। খবর বাংলানিউজের।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমে আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য প্রসার ঘটাব। এজন্য আমেরিকা থেকে আমাদের দরকারি কোনো কিছু ইমপোর্ট করতে হয়, আমরা এলএনজি এবং জিনিস ইমপোর্ট করব। সো দ্যাট তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরেকটু দৃঢ় হয়। আর আমাদের এখান থেকে যা এঙপোর্ট হয় আমরা করব। আমরা এখানে যে অ্যাকশন নেব আমাদের নিজস্ব গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্যরা যাতে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করে প্রতিযোগীদের তুলনায়। আমেরিকানরা মনে করে বাংলাদেশি পণ্য বেটার, অন্য দেশের তুলনায়। সেটাকে আমরা আরেকটু বাড়াব প্রাইভেট সেক্টরে। অন্যান্য সার্ভিস আমরা আমেরিকা থেকে আনতে পারব।

তিনি বলেন, নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার অনেক কিছু থাকে। এই যে ৫২, ৫৪ শতাংশ সংখ্যা আমরা দেখি, এর বাইরে অফিসিয়াল রেগুলেটরি অনেক রকম সুবিধাঅসুবিধা থাকে। আমেরিকার ব্যবসায়ীরা যাতে এগুলোর সম্মুখীন না হয়, এগুলো যত দ্রুত সম্ভব আমরা যুক্তিযুক্ত করব, এটাকে আরও স্মুথ করব। যাতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও প্রসার লাভ করে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমদানি করার ব্যাপারে আমেরিকা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তাতে করে অন্যান্য বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি চীন, ইউরোপ তারাও এর বিপক্ষে কতগুলো পদক্ষেপ নেবে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা পুরো জানি না। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি কোথায় যাবে, বড় ধরনের নাড়াচড়া খাবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আস্তে আস্তে সবকিছুই মাথায় রাখছি। আপাতত আমরা দেখব আমাদের প্রধান যে রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় বাজার, সেটা যেন রক্ষা পায়। আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যাতে আরও বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, যে করটা বাড়ানো হলো, এটা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে তাদের ব্যক্তিদের ওপর পড়বে। মধ্যস্বত্বভোগী যারা বায়িং হাউজ তাদের ওপর পড়বে। আমাদের ওপর কতটুকু পড়বে তার একটা বোঝাপড়া হতে হবে। আমরা এটুকু জানি, শ্রমিকের মজুরির দিক থেকে আমরা একেবারে সর্বনিম্ন জাগায় আছি। এর থেকে আর কমানো যাবে না এখানে। কাজেই করের বাড়তি বোঝা অন্য জায়গাতে শিফট হবে। আমাদের ওপর আর বেশি বোঝা চাপানো যাবে না। এটা সবাই বুঝবেন, আমেরিকার যারা পলিসি ঠিক করেন তারাও জানেন আমাদের দিক থেকে এর থেকে বেশি শ্রমিকদের খরচ কমানো যাবে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক এবং এটাকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েটলি যুক্তরাষ্ট্রে আমরা কীভাবে উপস্থাপন করব। সে লক্ষ্যে আজ আমাদের আলোচনা। আমাদের ট্যারিফ রিলেটেড মানে নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা যেগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক, আমরা সেগুলো রহিত করার বা পুনর্মূল্যায়ন করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেশ বাড়ানো সম্ভব। আমরা তার উপায়গুলো খুঁজছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যাতে করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজকে যে আলোচনাটি হয়েছে, সেখানে আমরা সকলেই এক সমতলে আছি। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেনটিভ অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকেও আমরা যে সংকেত পাচ্ছি সেটা আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে সাযুজ্য আছে। সুতরাং আমরা মনে করছি, আগামী একদুই দিনের মধ্যে আমাদের প্রজেকশনগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে পারব। এই কথাগুলো অনেকদিন ধরে আলোচনা হয়ে আসছে আমাদের ভেতরে। আপনারা আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর একটা প্রতিফলন দেখতে পারবেন।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি চিঠি যাবে যুক্তরাষ্ট্রে : যুক্তরাষ্ট্রের রিসিপ্রোকাল ট্যারিফের প্রেক্ষিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি ইউএসটিআরের কাছে পাঠানো হবে।

গতকাল বিকালে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। প্রেস সচিব বলেন, প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। আমাদের যেটা সিদ্ধান্ত, আমরা দুটি চিঠি দেব। দুটি চিঠি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাবে। একটা চিঠি যাবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আরেকটা চিঠি যাবে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টার তরফ থেকে ইউএসটিআরের কাছে।

চিঠিতে কী লেখা থাকবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিঠিতে কী কী থাকবে, কী ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ সেটা নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে। আজকে চারজন উপদেষ্টা ছিলেন, একজন হাইলি রিপ্রেজেন্টার ছিলেন, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, আমাদের প্রায় দশজনের মতো সেক্রেটারি ছিলেন, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, খুব দ্রুত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি চিঠি যাবে।

তিনি বলেন, চিঠিতে যাই থাকুক সেটা আমাদের ব্যবসাবান্ধব হবে। বাংলাদেশের ব্যবসার স্বার্থটা দেখা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কম্পিটিটিভ যেসব কান্ট্রি আছে তাদের চেয়ে আমরা আরো ব্যবসাবান্ধব হব, এই চিঠিটা হবে। আরো বেশি ব্যবসাবান্ধব হবে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের দুই পক্ষের জন্যই উইন উইন সিচুয়েশন হয় এবং আমাদের জন্য মার্কেট এঙেসটা যেন আরো বাড়ে।

শফিকুল বলেন, আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর লার্জেস্ট মার্কেট, সেখানে আমাদের আরো অনেক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার সুযোগ আছে। যেটা আমাদের উপদেষ্টারা এবং ব্যবসায়ী নেতারা আজকে বললেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছোট সাজ্জাদের ফের ৫ দিনের রিমান্ড
পরবর্তী নিবন্ধছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে ঈদের আমেজ