যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এখন থেকে স্কুল, গির্জা এমনকি হাসপাতালগুলোতেও অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। ট্রাম্প প্রশাসন সংবেদনশীল এই স্থানগুলোতে অভিবাসী আটক কার্যক্রমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার পর এখন এই ধরপাকড়ে আর কোনও বাধা নেই। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন সংস্থাগুলোর ওপর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব স্থানে অভিযান পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন তা উঠে যাওয়ার পর ওই দুই সংস্থা তদারককারী মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, অপরাধীরা আর গ্রেপ্তার এড়াতে আমেরিকার স্কুল এবং গির্জাগুলোতে লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসনও আমাদের বাহাদুর আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হাত বেঁধে রাখবে না।
গত মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি বেঞ্জামিন হাফম্যান সংবেদনশীল স্থানগুলো থেকে অভিবাসী গ্রেপ্তারের নির্দেশনাসহ আরও একটি নির্দেশনা জারি করেন। সেটি হচ্ছে, বৈধ কাগজপত্র না থাকা কেউ গ্রেপ্তার হলে সেই ব্যক্তি যদি যুক্তরাষ্ট্রে দুবছরের বেশি সময় ধরে তার অবস্থান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দ্রুতই দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ১৮ হাজার অভিবাসীকে ফেরত নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে এই খবর জানা গেছে। ভারতের জাতীয় সংবাদমাধ্যম ও পোর্টালগুলোও ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করতে শুরু করেছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে, ১৮ হাজার ভারতীয়ের যে হিসাবের কথা বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনই তাদের চিহ্নিত করেছে। এই সংখ্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ বা আইসিই–র তথ্য মিলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইসিই গত বছর নভেম্বরে প্রকাশিত এক তথ্যে জানিয়েছিল, ১৭ হাজার ৯৪০ জন ভারতীয়কে প্রত্যর্পণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্লুমবার্গ এটাও লিখেছে, অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল্লির তরফে ট্রাম্প প্রশাসনকে একটা বার্তা দেওয়া হচ্ছে যাতে ওয়াশিংটন কোনো ধরনের বাণিজ্যিক বিধি–নিষেধ আরোপ না করে।
প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো থেকে ব্লুমবার্গ জানতে পেরেছে, দেশে ফিরিয়ে আনার আগে অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয় এখন নিশ্চিত করবে ভারত। দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত আলোচনা যেহেতু গোপনে চলছে, তাই সূত্রগুলো নিজেদের নাম প্রকাশ করতে দিতে চাননি। কিন্তু তারা এটা জানাচ্ছেন যে সংখ্যাটা ১৮ হাজারের থেকে অনেক বেশিও হতে পারে। কারণ ঠিক কতজন ভারতীয় অভিবাসী বৈধ নথি ছাড়া আমেরিকায় বাস করছেন তার সঠিক সংখ্যাটা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউজে ফিরেই একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে একটি অ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। এই অ্যাপের কারণে কয়েক হাজার মানুষ সহজে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারত। অ্যাপটি বন্ধ করা ছাড়াও শরণার্থী ব্যবস্থা স্থগিত করা এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর সঙ্গে স্থানীয় ও রাজ্য সরকারের সমন্বয় আরও জোরদার করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাস করা লোকজনকে অবিলম্বে ধরপাকড় করা শুরু হবে।
এদিকে, সংবেদনশীল স্থানগুলোতে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন আইনজীবীরা। সেন্টার ফর ল অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, পদক্ষেপের কারণে অভিবাসীদের পরিবার ও তাদের সন্তানের পাশাপাশি মার্কিন শিশুরাও মারাত্মক মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
এর আগে, মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের এক বিশপ সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিবাসী এবং এলজিবিটিকিউ+ জনগোষ্ঠীর প্রতি এত কঠোর না হওয়া আহ্বান জানিয়েছেন।