যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন তাণ্ডব

ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা, নিহত ৪ স্তম্ভিত বিশ্ব, ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ জারি

| শুক্রবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে, সহিংসতার মধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত চারজন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে স্থানীয় সময় গত বুধবার দুপুরের পর এই হামলা শুরু হয়। এই ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। খবর বিডিনিউজের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ক্যাপিটল ভবন কার্যত দখল করে নিলে অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। পুলিশ পাহারা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেওয়া হয় আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলে। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের নেয় পুলিশ। এরপর ক্যাপিটলকে ট্রাম্প সমর্থকদের দখলমুক্ত করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। পরের তিন ঘণ্টায় হলওয়েগুলো দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের ছোটাছুটি ও বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি, হাঙ্গামা-বিশৃক্সখলায় এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সহিংসতার মধ্যে গুলিতে একজন নারী নিহত হন। পরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানায় ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ। এফবিআই জানায়, তারা দু’টি সম্ভাব্য বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ জারি করা হয়। শহরে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার।
বিবিসি জানিয়েছে, ওই হাঙ্গামার পর পুলিশ অন্তত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে; তাদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার জন্য। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকমাস ধরে যে বিভেদ সষ্টিকারী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছিল ক্যাপিটলে হামলা তার চূড়ান্ত পরিণতি বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স। ভোটে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ ছাড়াই বারবার দাবি করে আসছিলেন ট্রাম্প এবং তার পরাজয় উল্টে দিতে তাকে সাহায্য করার জন্য সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নির্বাচনের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ট্রাম্প। ক্যাপিটলে হামলার আগে হোয়াইট হাউসের কাছে কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি। ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের ক্ষোভ জানাতে সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে বলেন এবং কর্মকর্তাদের নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে চাপ দিতে বলেন। পাশাপাশি সমর্থকদের লড়াই করারও আহ্বান জানান। দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ক্যাপিটলের ভেতরে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করেন। ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি জানিয়েছেন, আক্রমণকারীরা যন্ত্রণাদায়ক রাসায়নিক নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার সাড়ে ৫টার একটু পরে ক্যাপিটল ভবন নিরাপদ বলে ঘোষণা করে পুলিশ। এরপর নির্বাচনী জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু করতে রাত ৮টার পর আইনপ্রণেতারা অধিবেশন ফের শুরু করেন। এরপর অধিবেশনের সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, আজ যারা আমাদের ক্যাপিটলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছ- তোমরা জয়ী হতে পারবে না। চলুন আমরা কাজ শুরু করি। কংগ্রেস সদস্যরা হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেন।
কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনল ঘটনাটিকে ‘ব্যর্থ বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে ‘অনাচার ও হুমকির কাছে মাথা নত করবো না’ বলে প্রতিশ্রুতি রাখেন। আমরা আমাদের অবস্থানে ফিরে এসেছি। সংবিধানের অধীনে এবং আমাদের জাতির জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। আর আজ রাতেই আমরা তা করতে যাচ্ছি, বলেন তিনি।
ট্রাম্প সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতার নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই সেখানে এই গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত আইনপ্রণেতাদের তাদের আসনের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক বের করে পরার পরামর্শ দেয়। মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য হ্যালি স্টিভেন্স টুইটে লিখেছেন, আমি আমার অফিসের এক জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটা আমাকে লিখতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মিউরিয়েল বাউজার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহরজুড়ে কারফিউ জারি করেন।
ক্যাপিটল পুলিশকে সহায়তা করতে কংগ্রেস ভবনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা, এফবিআই এজেন্ট এবং মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। কারফিউ শুরু হওয়ার পর ন্যাশনাল গার্ড সেনা ও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ক্যাপিটলের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেয়। রয়টার্স লিখেছে, হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার পর এই গোলযোগ দেখা দেয়। বক্তব্যে পুরনো অভিযোগ ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে তার কাছ থেকে নির্বাচন ‘চুরি করে নেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।
স্তম্ভিত বিশ্ব : এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘দুঃখ পেয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র। এছাড়া চীন, ভারত, জাপান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, তুরস্ক, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন উদ্বেগ জানিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে অস্পষ্টতা
পরবর্তী নিবন্ধদেশে অক্সফোর্ডের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন