বাংলাদেশি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনা জোরালো করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে আমরা আজকে শিল্পপতিদের সাথে কথা বলেছি, বিশেষ করে রপ্তানিকারক বড় বড় শিল্পপতি যারা জড়িত আছেন তাদের সাথে কথা বলেছি, ব্যবসায়ীদের নেতা যারা আছেন তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের মতামত শুনেছি। তারা সবাই মনে করছেন এই সমঝোতাকে শক্তিশালী করতে হবে। এখানে অনেকগুলো বিষয় আছে, এখানে শিল্পের বিষয় আছে, পোশাক খাতের একটা বড় বিষয় আছে, কর্মচারী–শ্রমিক সংগঠনের একটি বিষয় আছে, এখানে নিরাপত্তাজনিত কিছু বিষয় চলে আসছে এবং সেখানে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের একটা বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। আমরা আশা করছি, দেশের স্বার্থে, আমাদের দেশের আগামী দিনের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান অনেক কিছু জড়িত। এটাকে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই এর একটা সুষ্ঠু সমাধান দরকার। এই আজকে আমরা আলোচনায় বসেছি। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী খসরু বলেন, এর (এ বৈঠকের) পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে চেষ্টা করব ওনাদের (ব্যবসায়ীদের) মতামতগুলোসহ আমাদের বিষয়টা সরকারকে জানাব। এখানে মনে রাখতে হবে, সমন্বিত একটা বিষয় আছে। আসলে বিষয়টা এককভাবে কিছু করার বিষয় নয়, সমন্বিতভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে এ থেকে আমাদের অর্জন করা যায়… সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।
বাংলাদেশি পণ্যে এপ্রিলে প্রথম দফায় ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর পর তিন মাস তা স্থগিত রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাড়তি শুল্ক আরোপের সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার একদিন আগেই ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এরপর সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করতে ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বসে, যেখানেও এ নিয়ে সমাধান আসেনি। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে। সেজন্য আলোচনাও চলছে।
দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে দেশে ফিরে সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বসিরউদ্দিন বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়ে গেছে। সেগুলো আলোচনা করে অতি দ্রুত আমরা তৃতীয় দফার আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত যাচ্ছি। আশা করছি, আল্লাহর রহমতে ভালো ফল আসবে। এমন প্রেক্ষাপটে বনানীর হোটেল সেরিনায় বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ হলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য যায় তার সাথে জড়িত প্রায় ১৫/১৬ লক্ষ মানুষের জীবন–জীবিকা জড়িত। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি নয়, এটা সাথে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত।
আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। এটার সমাধান যদি সঠিকভাবে করতে না পারি তাহলে আমাদের অর্থনীতির সাথে জড়িত সবাই ক্ষতির মুখে পড়বে। বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি একে আজাদ ও সিমিন রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার–উল আলম চৌধুরী পারভেজ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, বিজেএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, লেদার গুডস অ্যান্ড ম্যান্যুফ্যাকচারস অ্যান্ড এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নিজাম মনসুর, সিরামিক ম্যান্যুফ্যাকচারস অ্যান্ড এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ জাব্বার, বাংলাদেশে টেরি টাওয়াল অ্যান্ড লেলিন ম্যান্যুফ্যাকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আমীর খসরুর সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাসভীরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন বৈঠকে অংশ নেন।