যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০তম দিন গতকাল হামলার এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে এটিএসিএমএস ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেয়ার মাত্র একদিন পরই এ হামলা চালানো হয়।
এদিকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার অনুমতির জবাব দিতেই পুতিন এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল সকালে রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন এটিএসিএমএস (আর্মি ট্যাকটিকেল মিসাইল সিস্টেম) ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে এ হামলা চালায় বলে জানিয়েছে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে একটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এর ধ্বংসাবশেষের কারণে ওই এলাকার সামরিক স্থাপনায় আগুন লেগেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই হামলা গতকাল দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটে করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের কারণে ধরা আগুন দ্রুত নিভে যায়। কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এর আগে নিশ্চিত করেছিল তারা রাশিয়ার ব্রায়ান্সক অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। তবে তাতে এটিএসিএমএস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা জানায়নি। তারা বলেছে, কারাচেভ শহরের কাছে সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে একটি ডিপোতে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এতে ১২টি বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এদিকে গতকাল পুতিনের স্বাক্ষর করা ডিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো।
গতকাল যুদ্ধের ১০০০তম দিবস পার করছে রাশিয়া–ইউক্রেন। এদিনই পুতিন তার দেশের পরমাণুনীতি হালনাগাদ করে এই ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুতিনের মুখপাত্র এবং রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ। নতুন এই ডিক্রিতে বলা হয়েছে, যেসব দেশের পরমাণু অস্ত্র নেই, তাদের যদি তৃতীয় কোনো দেশ বা পক্ষ এ ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্র প্রদান করে–সেক্ষেত্রে সেসব দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া।
গতকাল মস্কোতে ক্রেমলিন কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, পরমাণু অস্ত্র নেই–এমন কোনো আগ্রাসী দেশের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ কোনো দেশ যদি জোটবদ্ধ হয়, তাহলে তা আর একক নয়, বরং যৌথ হামলায় পরিণত হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের নীতি অক্ষুণ্ন রেখে যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, আমরা সেটিই নিয়েছি। পেসকভ আরও বলেন, রাশিয়া সবসময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার বিপক্ষে; আমরা শুধু আমাদের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
এর আগে গত রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার জন্য অনুমতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অনুমতির দুদিনের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারবিষয়ক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করলেন পুতিন।