যুক্তরাজ্যে হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পত্তির লেনদেন

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

| সোমবার , ২১ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় চুক্তি ও ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে সেগুলো যুক্তরাজ্যে পাচার করে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এসব ব্যক্তিদের সম্পত্তির বিষয়ে বাংলাদেশে যখন তদন্ত চলছে, তখন তারা তাদের সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তর করছেন।

১৯ জুলাই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে ‘হাসিনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিরা গত এক বছরে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি লেনদেন করেছেন বলে প্রতীয়মান’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাংবাদিক রব ডেভিস। খবর বাসসের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনার সরকার পতনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শত শত বিক্ষোভকারী নিহত হন। দেশটির স্বৈরশাসক পালিয়ে যাওয়ার প্রায় এক বছর পার হতে যাচ্ছে। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার এখন বিভাজনের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের জটিল বাস্তবতা সামাল দিতে লড়ছে। এই অস্থির প্রেক্ষাপটে লন্ডনের নাইটসব্রিজের কোনো দৃষ্টিনন্দন টাউনহাউজ বা সারের কোনো নিরিবিলি রোডে অবস্থিত প্রাসাদ যেন অনেক দূরের বিষয় মনে হতে পারে। তবুও এসব বিলাসবহুল ব্রিটিশ সম্পত্তিই এখন বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ঢাকার তদন্ত কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন, কীভাবে পতিত সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উচ্চপদে থেকে রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ও ব্যাংকখাত থেকে অর্থ লুট করেছেন। পরে সেই অর্থ যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছেন।

গত মে মাসে ব্রিটেনের ‘এফবিআই’ খ্যাত জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (এনসিএ) সালমান এফ রহমান পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ ফ্রিজ (জব্দ) করে। গার্ডিয়ানের আগের এক অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে এ পরিবারের সম্পত্তির বিশদ তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল। এর তিন সপ্তাহ পর এনসিএ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সম্পদ ফ্রিজ করে দেয়। শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনকালে যুক্তরাজ্যে ৩০০টির বেশি সম্পত্তির মালিক হন। এর মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে প্রাসাদসম টাউনহাউজ পর্যন্ত রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান ও দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানে প্রতিবেদনটিতে আরো অনেক বিষয় ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব বাংলাদেশি ঢাকায় তদন্তের আওতায় রয়েছেন, তাদের অনেকে সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে থাকা তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর বা বন্ধক রাখছেন। এসব লেনদেন প্রশ্ন তুলেছে, তদন্তাধীন ব্যক্তিরা কীভাবে এখনো লন্ডনে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন, আর তাদের লেনদেনে সহায়তাকারী যুক্তরাজ্যের আইন ও পরামর্শ সংস্থাগুলো কতটা সতর্ক ছিল।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ব্রিটিশ সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তারা যেন তদন্ত চলাকালে আরো সম্পত্তি ফ্রিজ করে ‘সতর্কতার পক্ষেই’ অবস্থান নেয়। অনেকে এটাকে বহু প্রতীক্ষিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বললেও কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই দেখছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় আ. লীগ নেতা মিন্টুসহ ২জন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধতিনটি যৌথ সামরিক মহড়া চালাবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র