‘সরকারের আনলিমিটেড রাজস্ব নাই’ মন্তব্য করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আমাদের ফান্ডিং যা বরাদ্দ করা হয়েছে, আমার মনে হয় সেটা নেওয়া দরকার। যেহেতু সরকারের রাজস্ব নাই, সরকার চাইলেই অনেক বেশি অর্থ কাউকে দিতে পারে না। আমরা সব মিনিস্ট্রি, ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রির সাথে মারামারি করি। লিটারেলি মারামারি করছি। আমরা চাইলে বাজেটটা পাই না। যে বাজেটটা পাওয়া গেছে, যেহেতু মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ, আপনাকে যদি ৫ শতাংশ দিয়ে থাকে তাহলে আপনি প্লিজ এই ফান্ডটা নিবেন এবং চট্টগ্রামের মানুষকে বঞ্চিত না করে এই ফান্ডটা দিয়ে কাজ শুরু করবেন। তিনি গতকাল সোমবার সকালে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান–২০২৫’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে চসিকের বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পকে ২৯৮ কোটি টাকা করে দেয়াসহ চসিকের তিনটি প্রকল্প আটকে থাকার অভিযোগ করেন বিশেষ অতিথি ডা. শাহাদাত। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কোরিয়ান ইপিজেড–এর চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সুং। বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। সিআইইউ–এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম নুরুল আবসার এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। সিআইইউ–এর সহকারী রেজিস্ট্রার রুমা দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল করিম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী নগর পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।
নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে কর্পোরেশনকে : সিটি কর্পোরেশনকে নিজেদের আয় বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাঙ, ব্যবসা বিকাশসহ নানাভাবে আয় বাড়াতে পারে। সিটি কর্পোরেশন যত বেশি সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে তত সিটি গর্ভমেন্টের ধারণাও পিছিয়ে যাবে। প্রমাণ করতে হবে, সিটি নিজের আয়ে নিজে চলতে পারে। যখন নিজের পায়ে দাঁড়াবে তখন এই ভয়েসটা জোরালো হবে যে আমি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ হওয়া ডিজার্ব করি না।
বিশেষ সহকারী বলেন, ‘এ বছর চট্টগ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই দিতে পেরেছি। আমরা এ বছর গলা পরিমাণ পানি দেখিনি। আমি জানি না, আপনারা দেখেছেন কিনা। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ যারা এ লক্ষ্যে কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের মোটিভেশনটা আছে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেটা শুরু হয়েছে, আশাকরি আগামী একবছরে সুফল দেখতে পাব।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্জ্যের শ্রেণীবিভাগ, সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং জরিমানা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি সমাজের সকল অংশের অংশগ্রহণে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সমাজে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা দরকার। জরিমানা ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভালো হয় না।
তিনি বলেন, জরিমানা শুরু করলে নগর ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা একটা মানসম্মত উন্নয়ন দেখতে পাবো। মানুষ ইচ্ছেমতো যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলবে, আর সিটি কর্পোরেশন সারাদিন পরিস্কার করতে থাকবে, এটা অসম্ভব। চট্টগ্রাম আমাদের দেশের একটা ইউনিক শহর। এখানে একটা সচেতন নাগরিক সমাজ আছে। এ নাগরিক সমাজ একেবারে প্রাণবন্ত এবং দায়িত্বশীল। তারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন।
বিশেষ সহকারী বলেন, পরিচ্ছন্নতা শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন বা সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সবার। তরুণ প্রজন্মকে এই উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন নগর গঠনে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের কার্যক্রম সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করে।
তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে বর্জ্য ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা একটি অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত এবং এর সমাধানের জন্য তিনটি মূলনীতি –সহনীয়, পূনঃচক্র ও পূনঃব্যবহার করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শ্রেণীবিভাগ ছাড়া টেকসই ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয় ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্ব পরিবেশ দূত হিসেবে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্জ্য ও আবর্জনা প্রশমন ইস্যুতে বাস্তবসম্মত সমাধান না পেলে শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য– যা তার বহুল আলোচিত থ্রি জিরো তত্ত্বের অন্যতম মূল উপাদান – সম্পূর্ণরূপে অর্জন করা সম্ভব নয়।
অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী খালেদ বলেন, নগরবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই পরিচ্ছন্নতা সম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে।