যা কিছু অর্জন, সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাতে : শেখ হাসিনা

তারেকের কথাতেই জিয়া-খালেদার দায় স্বীকার

| শুক্রবার , ২৪ জুন, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়নি, বরং এ দল যখনই সরকারে এসেছে, দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাস আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যদি দেখা যায়- আজ পর্যন্ত এদেশের মানুষের যতটুকু অর্জন, সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা যতটুকু অর্জন করতে পেরেছিলাম, ২০০১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে সবই নস্যাৎ করে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। পাঁচ পাঁচ বার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকতে দুর্নীতিতে এক নম্বর, চ্যাম্পিয়ন। সেই ভাবমূর্তি বাংলাদেশের জন্য কতটা অসম্মানজনক। সেই অবস্থারও পরিবর্তন আওয়ামী লীগ করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে এখন বিশ্বে একটা সম্মানজনক স্থানে আমরা নিয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা পেয়েছি।

এ দেশের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভালো জানাশোনা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশটা আমাদের। আমরা যতটুকু চিনি, জানি এদেশের প্রকৃতি, এদেশের পরিবেশ, এদেশের মানুষ, মানুষের কল্যাণ আওয়ামী লীগ যতটা বুঝবে; অন্যেরা তা বুঝবে না। বুঝবে কী করে? বিএনপির মনেই আছে পাকিস্তান। দিল মে হ্যায় পেয়ারে পাকিস্তান। সারাক্ষণ ওই গুনগুন করে গানই গায়। ‘… আঁখো কি তারা, আসমান কি চাঁন। মেরে জান, পাকিস্তান।’ এই হল খালেদা জিয়ার কথা। এ ধরনের মানসিকতা যাদের, তাদের বাংলাদেশের ভালো না চওয়াটাই স্বাভাবিক মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি তার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এটা নিয়ে আপনাদের এত দুঃখ করার, চিন্তা করার কিচ্ছু নাই। আর ওদের কথা যতটা না বলা যায়, ততটাই ভালো। কারণ ওরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বরং এগুলোকে সবগুলোকে গাট্টি বাইন্ধা পাকিস্তানে পাঠায় দিলেই ভালো হয়। কারণ পাকিস্তানের এখন যা অবস্থা ওখানে থাকলেই তারা ভালো থাকবে। এখনও লাহোরে সোনার দোকানে খালেদা জিয়ার বড় ছবি আছে যে ওই দোকানের সোনার গহনা তার খুব প্রিয়। তাদের মানসিকতা ওই দিকেই, আমাদের বাংলাদেশের জন্য না। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, এইচ এম এরশাদ- কারও জন্মই বাংলাদেশে নয় বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

‘জিয়া-খালেদার দায় স্বীকার’ : শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের ছেলে তারেক রহমান তা প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সমর্থন দিয়ে। তিনি বলেন, আজকে তাদের কথার মধ্য দিয়ে… এরাই যে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, বা চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, ৭৫ এর হাতিয়ারকে সমর্থন দিয়ে অর্থাৎ খুনিদেরকে সমর্থন দিয়ে। কারণ এই খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটা আইনে পরিণত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং এদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।
তিনি বলেন, আজকে এখানে আমি যখন শুনলাম, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয় ‘৭৫ এর পরাজিত শক্তি’ এটার মধ্য দিয়ে সে এটাই প্রমাণ করে যে, তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মাও যে পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল এবং এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলে দিয়েছিল, ইতিহাস মুছে ফেলে দিয়েছিল, জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলেছিল।

কাজেই এটা তো খুব স্বাভাবিক, তারা তো সেই স্লোগান দেবেই। সেই পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাই তো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা আছে, এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। পাকিস্তানিদের পায়ের লাথিঝাটাটাও তাদের কাছে ভালো লাগত মনে হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এই ইতিহাস মনে রেখে এদেরকে করুণা করতে হবে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, এরা চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা কীভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল, সে কথা সভায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গুম, খুন- এটা তো জিয়াউর রহমানই শুরু করে দিয়েছিল সেই ৭৫ এর পর, যখন সে রাষ্ট্রপতি হয়। খালেদা জিয়া এসেও তো আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে না দেওয়ার যে অভিযোগ দলটির নেতারা করে আসছেন, তার জবাবও সভায় দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে তারেক জিয়া তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল। একেবারে লিখিত দলিল, যে সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটা তো বিএনপি নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। কাজেই তাকে তো কেউ বিতাড়িত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল। তারপরে আর সে ফিরে আসেনি। একজন রাজনৈতিক নেতা, তার যদি এই সাহস না থাকে ফিরে আসার, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কীভাবে?

নিজের জীবনে আসা নানা বাঁধা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার কথাও দলের নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জিয়াউর রহমানকেও যে পরে নিহত হতে হয়েছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াও বলতে পারবে না, তার ছেলেও বলতে পারবে না যে কোনো দিন বাপের লাশ দেখেছে। কারণ গুলি খাওয়া লাশ তো দেখা যায়। তারা তো দেখতে পায়নি। সেই কথাটা তো একবারও স্মরণ করে না বিএনপির নেতারা, যে জিয়ার লাশ কোথায়। হ্যাঁ, একটা বাক্স এরশাদ সাহেব নিয়ে এসেছিলেন এটা ঠিক। কিন্তু সেই বাক্সে কি ছিল? পরে এরশাদ সাহেবের মুখেই তো আছে যে ওই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না, কারণ জিয়ার লাশ তখন তারা পায়নি। জিয়ার লাশ কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা বাক্স নিয়ে এসে ওই যে সংসদ ভবনের ওই জায়গায় তারা রেখে দিয়েছে এবং সেখানে গিয়ে ফুল, মালাও দেয়। কিন্তু সেখানে খালেদা জিয়ার স্বামীও নাই, আর বিএনপি নেতাও নাই। এটা হল বাস্তবতা। বাস্তব সত্যটা একদিন না একদিন প্রকাশ হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানি নিষ্কাশনের সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণে চসিকের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার যাচ্ছে জঙ্গল সলিমপুরে