যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

| শনিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুস্থ, ভাসমান ও অসচ্ছল মানুষের সহায়তার জন্য ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব জেলা প্রশাসকের অনুকূলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এই অর্থ বরাদ্দ করেছেন। এই অর্থ জেলাগুলোর জনসংখ্যা ও ত্রাণের চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়েছে। স্থানীয় তালিকা অনুসারে তৃণমূলের অভাবগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ করা হবে। জানা গেছে, দেশের একটি মানুষও যেন খাদ্যের অভাবে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। করোনার কারণে দেশের অনেক কিছু স্থবির হয়ে যায়, যারা দিনে এনে দিন খায়, তাদের অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাদের প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে।’ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আরো বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করবো। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও মানুষের পাশে থাকতে হবে। যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। আমার দেশের একটা মানুষও যেন কষ্টে না থাকে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং, সানেম গত বছরের জুন মাসে লকডাউন পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে উঠে আসে যে দুই মাসের লকডাউনের পর দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। ঐ গবেষণার একজন গবেষক বলেছেন, এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। গত বছরের লকডাউনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তারা সরকারি সহায়তা, রেমিট্যান্স সহ নানা ধরনের সহায়তার ওপর ভর করে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এখন আবার নতুন করে লকডাউন দেয়ায় মানুষজন আবারো অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, গত বছরের লকডাউনে নিম্ন আয়ের বহু মানুষ নিজেদের সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছে, অনেকের নতুন করে ঋণ নেয়ার মত পরিস্থিতিও নেই। এই অবস্থায় তাদের আয় এবং কাজের ধরণ বিবেচনা করে আলাদাভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, খুব দরিদ্রদের বা বস্তি এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার দিয়ে আসার ব্যবস্থা করা উচিত। শুনতে হাস্যকর শোনালেও, এই ব্যবস্থা না করলে অতি দরিদ্রদের ঘরে রাখা সম্ভব না। সেরকম মধ্যবিত্তদের জন্য স্বল্প পরিমাণে রেশনের মত খাদ্য ও জরুরি পণ্যের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে গত বছর এই বন্টনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে আগের বারের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে হঠাৎ করেই উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের। তাদের অনেকেই ভিড় করছেন স্বল্প মূল্যের টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রে। পাশাপাশি বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ওপরও জোর দেন তিনি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন লকডাউন কড়াকড়িভাবে কার্যকর না করা হলে বিধি-নিষেধ দীর্ঘায়িত হতে পারে, যার প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঠিকমতো সহায়তা পৌঁছিয়ে দিতে পারলে সংকট অনেকটা সুরাহা করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের মহানগর, জেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও যদি গরিব ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করে যান, তাহলে এই তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে নিঃসন্দেহে। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে