‘যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদে কী যন্ত্রণা’। গীতিকার হায়দার হোসেনের বিখ্যাত গানের পঙক্তিটি যেন এখানে বেশ প্রাসঙ্গিক। দুদিন আগে মারা গেলো সন্তান। মৃত সন্তানের নিথর দেহের পাশেই ‘পাথরের মতো’ দাঁড়িয়ে আছে এক মমতাময়ী মা। মানুষের আর বুনো প্রাণীর এখানে যেন নেই বিশেষ কোনো তফাৎ। বলছি গত সোমবার রাঙামাটির বরকলে মারা যাওয়া হাতি শাবক ও তার মায়ের কথা। গত সোমবার রাতে মারা যাওয়া শাবকটির পাশেই দুদিন ধরেই অপেক্ষা করছে মা। মানুষের উপস্থিতি পেলেই তেড়ে আসছে মা হাতি। দুদিন ধরে চেষ্টা করেও হাতি শাবকের মৃতদেহ কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি বন বিভাগ। ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সোমবার রাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কাচালংমুখ বনশুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির আওতাধীন রাঙামাটির বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি গ্রামের লিটনের টিলায় একটি হাতি শাবক মারা যায়। বন বিভাগ জানিয়েছে, খাড়া পাহাড় থেকে পা পিছলে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে পড়ে যায় হাতি শাবকটি। আহত অবস্থায় পরে হ্রদে ডুবেই মারা যায় হাতি শাবক।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মারা যাওয়া শাবকটি সমপ্রতি ‘গোলাপি হাতি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। তার বয়স ৮–১০ মাস হতে পারে বলছে বন বিভাগ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন বিভাগ বুনো হাতির শাবকটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। শাবকটির পাশের টিলাতেই মা হাতি দাঁড়িয়ে আছে। গতকালও একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিল মা হাতিটি। যে কারণে দুইদিনেও শাবকটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে গতকাল পানিতে ভাসমান হাতি শাবকের মৃতদেহের অবস্থান স্থানান্তর হওয়ায় তার মায়ের অবস্থানও পাল্টেছে।
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, হাতি শাবক মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ওই কমিটিসহ আমরা আজকে (বুধবার) আবারও ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আজকে গিয়ে আমরা দেখতে পাই মৃত হাতির বাচ্চাটা যেখানে ছিল সেখান থেকে সরে আরেকটা টিলার পাশে এসছে। মা হাতিটি ৮–১০ ফুটের মধ্যেই ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু মা হাতিটি সেখানে অবস্থান করছে, আমরা তাদের কাছাকাছি যেতে পারিনি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা যে টিম পাঠিয়েছেন তারাও নিশ্চিত হয়েছেন যে শাবকটি পড়ে গিয়েই হ্রদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। যেহেতু কাছে যাওয়া যাচ্ছে না, তাই পোস্টমর্টেম করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা মা হাতি ও হাতির পাল থাকা অবস্থায় সেদিকে যেন না যাই। যদি হাতির পাল সেখান থেকে সরে যায় তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলা এবং উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন বরকল ও লংগদু উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বুনো হাতির পাল দেখা যায়। এ চারটি উপজেলায় বুনো হাতির পালে ২৪–২৬টি হাতি দেখা যায়।