যারা ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, তারাই যেন মুখ্য পদগুলো পায়

ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শাহাদাত আ. লীগের নেতাকর্মীর সাথে ছবি থাকলে পদ থেকে বাদ দিতে হবে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৫ জুন, ২০২৫ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

৫ আগস্টের পর বিএনপিতে সক্রিয় হওয়া নেতাকর্মীরা যেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ না পায় সে বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বার্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। নগর বিএনপির সাবেক এ সভাপতি বলেন, তারা (যারা ৫ আগস্টের পর সক্রিয় হয়েছেন) হয়তো মেম্বার হতে পারবে, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে তারা থাকতে পারবে। যারা ১৬টি বছর আন্দোলনসংগ্রাম করেছে, তারাই যাতে মুখ্য পদগুলো পায়। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরের লাভ লেইন স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে ঈদুল আজহা পরবর্তী নগরবাসীর জন্য আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শাহাদাত বলেন, তারেক রহমানের বার্তা আমরা এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই। উনি আরেকটি কথা বলেছেন, ইতোমধ্যে যারা বিভিন্ন পদ পেয়েছে, তাদের যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সাথে কোনো ছবি থাকে, তাদের সে পদ থেকে বাদ দিতে হবে। এ ধরনের কোনো প্রমাণ যদি কারো বিরুদ্ধে থাকে সেটা আপনারা কেন্দ্রীয় দপ্তরে এবং এখানকার দপ্তরে তা জমা দেবেন। অবশ্যই জমা দেবেন। সিটি মেয়র বলেন, ১৬ বছর যারা আন্দোলনসংগ্রাম করেছে তারাই পদ পাবে। যারা ৫ আগস্টের পর এসে বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করতে চায়, তাদের ব্যাপারে আমাদের কথা আছে। আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি।

বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, শুক্রবার লন্ডনে দেশনায়ক তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে ২০২৬এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার যে বার্তা এসেছে, তা সবার জন্য একটা সুখের বার্তা। তাতে অন্যান্য দল যারা ভোট পেছানোর চিন্তাভাবনা করেছে তাদের আশায় গুড়েবালি হয়ে গেছে। তার চিন্তা করেছিল, বছরের পর বছর নির্বাচন পিছিয়ে দেবে।

ডা. শাহাদাত বলেন, আমরা একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন চাই। আমরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আবারও বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। সেই নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সে নির্বাচন হবে এবং সেজন্য জাতীয়তাবাদী দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছে। আমরা মানুষের ম্যানডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাই। পেছনের দরজা দিয়ে বিএনপি কখনো ক্ষমতায় আসেনি, আসতেও চায় না। আমরা চাই মানুষ তাদের ভালোবাসা দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনুক। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে।

তিনি বলেন, আজকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন, সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আমরা একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। আমাদের যে গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, যেটা আমরা হারিয়েছি, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠিত হবে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, তারেক রহমান সাহেব বারবার বলেছেন। আমরা কোনো বিভেদ রাষ্ট্রীয়ভাবে, জাতীয়ভাবে চাই না।

শাহাদাত বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা আমাদের সবার জন্য সুখের বার্তা। গত ১৭ বছর বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে গুম হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন এবং অনেকে কারাবরণ করেছেন। অনেকে শত শত মামলার শিকার হয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কোর্টের বারান্দায় সময় পার করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি গত ১৬টি বছর অনেক নেতাকর্মী তাদের পরিবারকে আহার দিতে পারেননি, ঘরে থাকতে পারেননি। কিন্তু তারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য গত ১৬টি বছর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন কর্মীও আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি; সে কর্মীরা হচ্ছে সাচ্চা কর্মী, নৈতিকতায় বিশ্বাসী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে তারা আস্থাশীল এবং তারা এখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’ এর অপেক্ষায় আছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের রুহের মাগফিরাত কামনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। অতিথিদের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শামসুল আলম, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিডিএ বোর্ড মেম্বার জাহিদুল করিম কচি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য এড. বদরুল আনোয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাণ গেল মা ও শিশুপুত্রসহ একই পরিবারের তিনজনের