যারা সংস্কারের কথা বলে তারা সংস্কার অর্থ বুঝে না : খসরু

উত্তর কাট্টলীতে বিএনপির অর্থায়নে দুটি খাল খনন ও পরিষ্কার কার্যক্রম উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩ মে, ২০২৫ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

যারা সংস্কারের কথা বলে তারা সংস্কার অর্থ বুঝে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তারা সংস্কারকে রাজনীতিকরণ করে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। জনগণের ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাচ্ছে। এটা আমরা হতে দিব না, এটাও বিএনপির রাজনীতি। বাংলাদেশের জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত যত সংস্কার হয়েছে; রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এর প্রায় সবগুলোই বিএনপির করা।

তিনি গতকাল শুক্রবার সকালে নগরের কাট্টলী কর্নেলহাট বাজারের ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন রেললাইনের পাশে নাজির খাল ও কালির ছড়া খাল পরিষ্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে উদ্বোধক ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির অর্থায়নে খাল দুটো খনন ও পরিষ্কার করা হচ্ছে। এতে এক কোটি টাকা খরচ হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিক উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৬ থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এর কোনো প্রতিফলন খালগুলোতে দেখছেন, না পানি নিষ্কাশনে দেখছেন? চট্টগ্রামে একটু বৃষ্টি হলেই এখনো ডুবে যাচ্ছে। সুতরাং আগে কি হয়েছে বলার দরকার হয় না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না হলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যেভাবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা আজ মহানগরে পুনঃপ্রবর্তন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন সার্বিক সহায়তা করছে কিন্তু স্থানীয় নেতাকর্মীরা এটার দায়িত্ব নিয়েছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে পানি নিষ্কাশনে বড় সমস্যা আছে। সেটা সমাধান করা প্রথম দায়িত্ব। খাল খননের সাথে পারিপার্শ্বিক যে উন্নয়ন হবে, খালের দুই পাড়ে যারা বসবাস করে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তাদের স্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকার বিষয় আছে এখানে।

তিনি বলেন, অনেকগুলো খাল ভরে গেছে। অনেকগুলো খাল আংশিক দখল হয়ে গেছে। এগুলো মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে সরকারে যে খাল ছিল সেগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। এখানে বিনোদনেরও ব্যাপার আছে। খাল পরিষ্কার করে দুই পাশে বিনোদনেরও কিছু সুযোগ আছে, সেটাও হবে। আমাদের যোগ্য মেয়র আছে, তিনি উদ্যোগ নেবেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, অতীতে যারা ছিল তারা জনগণের ভোটে নিবাচিত না হওয়ায় স্বেচ্ছারিতা করেছে। তারা মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। অপরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামকে সাজানোর চেষ্টা করেছে, টাকাগুলো বাইরে পাঠানোর জন্য। খালনালার উপর অবৈধভাবে স্থাপনা করেছে আগে যারা মেয়র বা সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিল। সেগুলো আমরা ভেঙে দিয়েছি। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যা যা করা দরকার, খালানালা উদ্ধার সেগুলো করব। আমাদের অভিযান চলতে থাকবে।

এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাল খননে উদ্যোগ নেয়ায় স্থানীয় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, একটি ওয়ার্ড থেকে দুটি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি অবশ্যই ভালো কাজ, মহৎ কাজ। তবে এটি যেন চট্টগ্রাম নগরের প্রত্যেক ওয়ার্ডেই এর প্রতিফলন দেখতে পারি। বিএনপির রাজনীতি, স্লোগান আর বক্তৃতা নয় শুধু, এটা শহীদ জিয়ার রাজনীতি, উন্নয়নের রাজনীতি, উৎপাদনের রাজনীতি। তাই আমাদের এ সমস্ত কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে।

তিনি বলেন, আন্দোলনসংগ্রাম শেষ। এখন দেশ গড়ার সময়। দেশ গড়তে হবে। এজন্য বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে দেশ গড়ার জন্য। দেশ গড়ার যত রকম ফর্মুলা আছে তা আমাদের শহীদ জিয়াউর রহমান দিয়ে গেছেন। আমরা কিন্তু এখান থেকে অনেক পিছিয়ে গেছি। এটাকে এখন আমাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, খাল খননে স্থানীয় কোনো উদ্যোগে সিটি কর্পোরেশনের এগিয়ে আসা ও সহযোগিতা করা এই প্রথম। চট্টগ্রামবাসীর সৌভাগ্য আজকে অনেকদিন পরে চট্টগ্রামে একজন দক্ষ, সুযোগ্য, শিক্ষিত, সৎ একজন মেয়র এসেছে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটা আমরা বহু বছর দেখিনি কিন্তু। শাহাদাত রাস্তায় আন্দোলনসংগ্রাম করে ওঠে এসেছে। খুব খারাপ সময়েও সে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগ, এই সুযোগটা গ্রহণ করতে হবে। সকলে তাকে সহযোগিতা করবেন। তাহলেই আমরা চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বদলাতে পারব।

খসরু বলেন, খাল খনন বিএনপির রাজনীতির অন্যতম পিলার। খাল খনন মানে শুধু পানি নিষ্কাশন না। খাল খননের মাধ্যমে একটি শহরের পানির যে স্রোত এটা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন শহরে খালের আশেপাশে একটি ভিন্ন অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। খালের দুই পাড়ে স্থানীয় মানুষের জন্য একটা বিনোদনের জায়গা হতে পারে। তাদের হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে করে দেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, খালেরও একটা অর্থনীতি আছে। শহরের মধ্যে প্রতিটি খাল যখন আমরা এভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারবো এবং সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো তখনই খালের একটি অগ্রগতি হবে। সাথে সাথে খালের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষির যে কাজগুলো আছে সেগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে। পানির প্রাপ্যতা অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে পানিগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিষ্কার থাকলে ব্যবহারও করা যাবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম শহরে একসময় ৭১ টি গুরুত্বপূর্ণ খাল ছিল। এসব খাল ভরাট হয়ে যাওয়াই নগরীর জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। এসব খাল খননের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হওয়ার কথা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির চক্রান্তে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই কাজ সিডিএ’র হাতে চলে যায়।

মেয়র বলেন, সিডিএ ৫৭টি খাল চিহ্নিত করলেও মাত্র ৩৬টি খাল খননের কাজ করছে। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশন মাত্র একটি খাল খনন করছে। ফলে অন্তত ২০টি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে, যার ফলে নগরবাসী এখনও জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এছাড়া, খাল খননে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সিডিএ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও তারা প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি, বরং এর মাধ্যমে মেগা দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।

শাহাদাত বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সিডিএ ও চসিকের প্রধানরা খাল ও নালার ওপর মার্কেট, ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা খাল বা নালার উপর থাকতে পারে না।

মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, কিন্তু এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সততার সঙ্গে কাজ করছি। তাই আমি অতিদ্রুত যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজে খাল খনন করে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছেন। খাদ্য উৎপাদন দিগুণ করে বিদেশে রপ্তানি করেছেন। তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে খাল খনন বিষয়ে একটি দফা আছে। বিএনপির ৩১ দফা হচ্ছে আমাদের মুক্তির সনদ।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, গত ১৬ বছরে উন্নয়নের নামে চট্টগ্রাম নগরকে জলাবদ্ধতার নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে জলাবদ্ধতা এখন চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে দলমত নির্বিশেষে একযোগে কাজ করতে হবে।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চসিকের সচিব আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মঞ্জুর আলম চৌধুরী মন্‌জু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী। উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য আবুল হাশেম, জাফর আহমেদ, বিএনপি নেতা আব্বাস রশিদ, আবদুস সাত্তার সেলিম, মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাঈনু, রেহান উদ্দিন প্রধান, আলী আজম চৌধুরী, আইয়ুব খান, শামছুল আলম সেক্রেটারি, শ ম জামাল উদ্দিন, জমির আহমদ, সাইফুল আলম, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সকিনা বেগম, মো. সেলিম, মো. আলাউদ্দিন, মো. শফি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যান্সারের আনসার মিলছে যেখানে
পরবর্তী নিবন্ধসেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ ও অপারেটর আসতে পারে