যারা শিল্প সৃষ্টি করে তারা মানুষের মূল্যবান সম্পদ

প্রমা অবন্তীর নাচের প্রতিষ্ঠানে আপ্লুত ড. পবিত্র সরকার

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২২ at ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

নৃত্য মানুষের মনোজাগতিক প্রকাশভঙ্গি। নিজেকে সমর্পণ করলেই কেবল মানুষ নাচের অন্তর্নিহিত নির্যাস উপভোগ করতে পারবে। তেমন একজন সার্থক শিল্পী প্রমা অবন্তী। নৃত্য তার সাধনা। এই নাচের শেকড় কেউ খুঁজে পায়, কেউ পায় না। প্রমা অবন্তী খুঁজে পেয়েছেন আর গভীর আবেগে, নিখাদ ভালোবাসায়, শ্রমে ও ঘামে নিজেকে নিয়ে গেছেন শেকড় থেকে শিখরে। যোগ্য সাহচর্য পেয়েছেন সহযাত্রী, স্বামী নাট্যজন অধ্যাপক কুন্তল বড়ুয়ার। তাই মঞ্চই তাদের সংসার, সংসারই কখনো আবার মঞ্চ। অপরূপ দেহভঙ্গিমা আর নান্দনিক মুদ্রায় প্রমা অবন্তী যখন নাচেন তখন তার সঙ্গে মিশে থাকে অন্তরের আবেগ। প্রমা অবন্তীর কাছে নৃত্য শুধু কৌশল নয়, প্রাণের উচ্ছ্বাসও বটে। তার নূপুরের ধ্বনিতে মানুষের সুখ-দুঃখও প্রতিধ্বনিত হয়। দেশ হতে দেশান্তরে যতই সুনাম ছড়িয়ে পড়ুুক, ফিরে এসেছেন তিনি মাটির টানে প্রিয় চট্টগ্রামে এবং গড়ে তুলেছেন ওডিসি টেগোর এন্ড ড্যান্স মুভমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠান।

গতকাল শনিবার প্রিয় ছাত্রীর সে প্রতিষ্ঠান দেখতে এসে রীতিমতো মুগ্ধ পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. পবিত্র সরকার; ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন প্রমা অবন্তী ছিলেন যার প্রিয় শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম এসেছেন বড় মেয়ে বসুধিতি সরকারকে নিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে। প্রিয় ছাত্রী প্রমা সেই শহরেই থাকেন এবং তার প্রিয় ওড়িষী নৃত্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিষ্যদের মাঝে- বিষয়টি তাকে আপ্লুত করে। প্রিয় শিক্ষার্থীদের সাফল্য একজন শিক্ষকের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পবিত্র সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই গতকাল বিকেলে মেয়ে বসুধিতিকে নিয়ে চলে আসেন নগরীর হেমসেন লেইনস্থ অবন্তীর ওডিসি টেগোর এন্ড ড্যান্স মুভমেন্ট সেন্টারে।

ড. পবিত্র সরকার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, শিল্পচর্চার জন্য রবীন্দ্রভারতী প্রতিষ্ঠা। তাতে নাচ গান ভাস্কর্য নাটক নির্মিত হবে, দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে এটাই ছিল উদ্দেশ্য। এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ তো রবীন্দ্রনাথ। আরেকটি কারণ হচ্ছে প্রমার মতো মেয়েরা বহু দূর থেকে এসে একটা শিল্পকে একটা জায়গায় প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং তোমাদের মতো ছোট ছোট মেয়েরা এসে শিখছ অসাধারণ সুন্দর একটা শিল্প। শিল্প মানুষকে মানুষ করে। গান নাচ ছবি আঁকা যদি না থাকতো, তাহলে আমাদের সাথে পশুদের কোনো তফাৎ থাকতো না। কেননা মানুষের মুখে ভাষা আছে এবং ভাষার মধ্য দিয়ে শিল্পের একেটি মাধ্যম সৃষ্টি হচ্ছে। যারা শিল্প সৃষ্টি করে তারা মানুষের এক মূল্যবান সম্পদ।

আমরা দেখে মুগ্ধ হই। তোমরা যে সৌন্দর্য সৃষ্টি কর, তা দেখে আমাদের জীবনটা মূল্যবান হয়। প্রমার মতো মেয়েরা দেশে দেশে শিল্প সৃষ্টি করে চলেছে, আমাদের অহংকারের শেষ নেই। পবিত্র সরকারের মেয়ে বসুধিতি আর প্রমা একই গুরুর কাছে নাচ শিখেছেন। বসুধিতি জানান, ভীষণ আনন্দ লাগছে। এত মিষ্টি ঘুঙুরের আওয়াজ। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের নাচ দেখে অভিভূত বসুধিতি বলেন, মন দিয়ে নাচ শিখছো দেখে আনন্দ লাগছে। কারও জন্য নয়, নিজের মনের আনন্দ পেতে নাচ শেখো। নিজের সৃষ্টিতে নিজেই মুগ্ধ হও। আমাদের সমাজটাতে নারীদের আনন্দ পাওয়ার তেমন সুযোগ নেই। কাজেই নিজের আনন্দ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। সংক্ষিপ্ত আয়োজনে প্রমা অবন্তীর শিষ্যরা একে একে নৃত্য পরিবেশন করেন। এসময় অধ্যাপক সঞ্জীব বড়ুয়া এবং অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু-কিশোরদের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় গড়ে তুলতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধকোয়েপাড়ায় অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্পন্ন