যারা নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করছেন, তারা গণতন্ত্র উত্তরণে বাধা সৃষ্টি করছন বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, এর মাধ্যমে আপনারা হয়ত নিজের অজান্তেই গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন। একই সঙ্গে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথও হয়ত সুগম হচ্ছে, যদি আমরা গণতন্ত্র উত্তরণের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করতে থাকি। খবর বিডিনিউজের।
তারেক রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সহযোগীদের প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া উচিত হবে না, যে বিরোধকে পুঁজি করে পরাজিত ফ্যাসিবাদ নিজেদের অপকর্মগুলোকে জাস্টিফাই করার সুযোগ নিতে পারে। আমরা মনে করি, প্রতিটি ইস্যুতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ওই মত হতেই হবে, এটি এমন কোনো জরুরি নয়। তবে অবশ্যই পলাতক স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকানো কিংবা দেশকে তাবেদারমুক্ত রাখার মতন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে অবশ্যই ঐকমত্য এবং ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
তারেক রহমান বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতি করতে গিয়ে দেশকে তাবেদারি রাষ্ট্র ও বিশাল জেলখানায় পরিণত করেছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশেও যারা মনে করছেন নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে, যারা এই চিন্তা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা রকম অপকৌশলের বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতেন চাই, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করুন, জনগণের শক্তির উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দিয়েই থাকে সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায়ের পথ রুদ্ধ করবেন না।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি এ মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনো উপযোগী নয় বলেই আমরা কম–বেশি মনে করি। কাকে কিংবা কোনো ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে, নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত যে পিআর পদ্ধতি, তাতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার পরিষ্কার কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জাতীয় সংসদ বা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে অবশ্যই তাদেরকে জনগণের মুখোমুখী হয়ে জনগণের আস্থা–বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে জনগণের রায় অর্জন করা জরুরি। পিআর পদ্ধতি এবং আও দুই–একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্ন মত রয়েছে। এ ধরনের ভিন্ন মত গণতান্ত্রিক বিশ্বে স্বীকৃত; এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে যাবে বা সমাধান করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ।
হিন্দু সম্প্রদায়কে জন্মাষ্টামীর শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক বলেন, যে কারণেই হোক না কেন, ঘটনাগুলো… কোনো কারণেই যেন কারো ওপর কোনো হামলা কিংবা অবিচার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব। এদেশ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা দলের নয়। এদেশ আপনার–আমার, আপনাদের–আমাদের সবার। দলমত ধর্ম নির্বিশেষে, বাঙালি অবাঙালি, নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী, বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী, দেশের প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র গর্বিত পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। দেশের প্রত্যেক নাগরিক সব ক্ষেত্রে দেশের আইন অনুযায়ী সমান অধিকার ভোগ করবেন, এটি বিএনপির নীতি, এটি বিএনপির রাজনীতি।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আমাদের সামনে একটি বিশাল বড় সুযোগ। সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই ও বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা চায়।