বাংলার আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায় একজন প্রথিতযশা শিল্পী। কখনো প্রতীচ্যের ধারায়, কখনো প্রাচ্য রীতিতে আঁকা তাঁর ছবিগুলো পেয়েছে আধুনিক শিল্পের বিস্ময়কর অভিব্যক্তি।
যামিনী রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ১১ এপ্রিল ভারতের বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে। শৈশবে বাবার সাথে নিজ গ্রামে বেড়াতে গিয়ে কুমোর শিল্পীদের সাথে সময় কাটাতেন।
এই গ্রামীন শিল্প তাঁর পরবর্তী শিল্পী জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। চিত্রকলায় যামিনী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছেন কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে। এই প্রতিষ্ঠানেই তিনি বিখ্যাত শিল্পী গিলার্দি ও পার্সি ব্রাউনের সংস্পর্শে আসেন। এ সময় পাশ্চাত্য শিল্পরীতি, বিশেষ করে তেল রঙে সপ্রতিভ যামিনী পরবর্তী সময়ে প্রভাবিত হন জলরঙে। যামিনী রায়ের সৃষ্টিতে ইউরোপীয় ধাঁচের ছোঁয়া থাকলেও আবহমান বাংলার মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, লোকজ সংস্কৃতি, ধর্মাশ্রয়ী কাহিনি প্রভৃতির মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায় বর্ণাঢ্য রং আর ছন্দোময় রেখার টানে।
এক পর্যায়ে কালীঘাটের পটুয়াদের আঁকা ছবির দ্বারাও প্রভাবিত হয় তাঁর শিল্পী মন। তবে সর্বদাই তিনি নিজস্ব শিল্পরীতি অনুসরণ করে চলেন। সকলের কাছে গ্রহণীয় ও সহজলভ্য করার জন্য শিল্পী তাঁর চিত্রে ভূষোকালি, খড়িমাটি, ফুল-লতার রস থেকে আহরিত রং ব্যবহার করেন। এভাবে পটচিত্রের আদলে তিনি সৃষ্টি করেছেন প্রচুর ছবি। ১৯৫৫ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল প্রয়াত হন শিল্পী যামিনী রায়।